অনেক ভাই মাঝে মাঝেই বলে প্রানের সংগঠন। আমার কাছে বিষয়টি একটু খটকা লাগে যখন এই প্রানের সংগঠনের কথা বলতে গিয়ে প্রায়শঃ অনেকেই ইমোশনাল হয়ে পড়ে। তখন একটি ইকুয়েশন মেলানোর চেষ্টা করি
সংগঠন=ইসলাম ; এটা কি আসলেই একটি সঠিক ইকুয়েশন? ইকুয়াল হওয়া নিয়ে কি আমরা ভাবি??
সংগঠন বলতেই আমরা বেহুশ, আমার কাছে মনেহয় সংগঠনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারনেই পলিটিক্স নামক ধুম্রজাল প্রায়শই আমাদের আমল এবং চিন্তার মাঝে ভেজাল ঢ়ুকে দেয়। সংগঠনকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে, কিন্তু সেটি অন্ধভাবে নয়। অন্ধভাবে ভালোবাসলে তো আমরা আবু জেহেল এবং আবু লাহাবদের মতই অন্ধ ভাবে বাপ-দাদা রেখে যাওয়া জিনিসকে আকড়ে ধরলাম।
ইসলাম গতিশীল, যারা বলে প্রানের সংগঠন তারা যদি প্রানের সংগঠনের জায়গায় প্রানের ইসলাম বলতো তাহলে বেশি ভালো শোনাতো। কারন হলো মানুষ বৈশিষ্ট্যগত ভাবে যা ভালোবেসে বড় হয় সেটাকেই বড় ভাবতে শেখে, ফলে যা কিছু সে বিচার করে সেই ছাকনির আলোকেই বিচার করে যা সে ধারনা লাভ করে আশেপাশের পরিবেশ থেকে। ফলে অনেক সময় সংগঠনের স্বার্থ এবং ইসলাম কিংবা আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। মানুষের ভালোবাসার সংগঠনের গতিশীলতার জন্য, আমরা নিজের অজান্তেই অনেক কিছু মেনে নেই যা হয়ত রাসুল (সাঃ) সুন্নাতের পরিপন্থী। আবার অনেক সময় এমনও দেখা যায় মতের অমিলের কারনে হয়ত অনেক সম্ভবনাময় কর্মীর মান উন্নয়ন কিংবা খুব ভালো আমলের কেউ দ্বায়িত্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এটি হয় কারন সংগঠনের স্বার্থ সবার আগে থাকে আর যেহেতু আমরা সংগঠনকে সেভাবেই ভালোবাসি তাই অনেক সময় সংগঠনের স্বার্থ বলতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই বুঝি, কিন্তু সমস্যা দাড়ায় যদি সেই স্বার্থের আদায় রাসুল (সাঃ) সুন্নাতের পথে না হয়। তখন হয়ত এসব মনে থাকেনা। আর সমালোচনা সেতো আনুগত্যের বড় খেলাপ।
To be muslim বইটির শেষ অধ্যায়ে বাইয়াতের গুরুত্ব নিয়ে কিছু লিখা আছে। লেখক সুন্দরভাবে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন যে কাকে বাইয়াত দেয়া যাবে।
আবার বর্তমান সময়ে নানা ধরনের সংগঠন এবং নানা ধরনের মতভেদ, মত পার্থক্য তৈরী হওয়ায় বাইয়াত জিনিসটি একটি জটিল বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়। আমি হয়ত কেউ না এসব বলার। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি খুজে ফিরি,
যেমন ধরুন আমি কোন ইসলামী সংগঠনের কাছে বাইয়াত নিলাম, যে আল্লাহর ও রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য করব। করলাম ভাবোভাবে। এই দুই আনুগত্য নিয়ে হয়ত কারো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা দেয় সংগঠনের আনুগত্যএর ব্যাপারে। বাইয়াত নিয়ে অনেক সময় শুধুমাত্র মত পার্থক্যের কারনে বাইয়াত ছিনিয়ে নেয়া হয়। এখন প্রশ্ন হলো এই বাইয়াত ছিনিয়ে নেয়া বা বাতিল করার যোগ্যতা কারা রাখে?? আবার কেউ যদি কোন সংগঠন হতে বাইয়াত বাতিলে সম্মুখীন হয় সে যদি অন্য ইসলামী সংগঠনে যুক্ত হয় তাহলে সে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর বরখেলাপ করে কিনা??
আবার সে যদি অন্য ইসলামী সংগঠনে যুক্ত হয় তাহলে আগের সংগঠনের সেই উখুয়াতের আদর্শে উদ্ভুদ্ধ ভ্রাতৃসকল তাকে কিভাবে দেখে?? এগুলো আসলেই জটিল সাংগাঠনিক বিষয়। যদিও আমার মত ছোট ক্লাশের মানুষের কাছে এগুলো বোধগম্য নয় তবে মাঝে মাঝে এই বাইয়াত জিনিসটা ধাধায় ফেলে দেয় । আবার যখন তখন যখন কারো বাইয়াত কেড়ে নেয়া হয়, তখন এই ধাধা আরো বেড়ে যায়। যেমন ধরুন, আমি একটি ইসলামি সংগঠন যুক্ত থাকলাম বাইয়াত নিলাম, যদি আমি আর একটি ইসলামী সংগঠনে প্রোগ্রামে যাই এবং সেখানে যদি রাসুল (সাঃ) সুন্নাতের বরখেলাম হয় এমন ঘটনা না হয় তাহলে আমার বাইয়াত কেড়ে নেয়া যাবে কিনা, বা নিলে সেটিও রাসুল (সাঃ) সুন্নাতের সাথে যায় কিনা? এই বাইয়াত দেয়া এবং নেয়াকে যদি দুভাবে ভাগ করা যায়, এবং সেভাবে বিষয় গুলো দেখা হয় তাহলে প্রশ্ন কম তৈরী হবে, বাইয়াত আর ছেলেখেলার বিষয় মনে হবে না।
যেমন বাইয়াতকে দুই ভাগে ভাগ করা যাইতে পারে…।
১) সাংগাঠনিক শৃংখলা মেনে নেয়ার বাইয়াত
২) আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) কে সর্বোতভাবে মেনে চলার বাইয়াত।
যদিও কেউ সাংগাঠনিক কোন শৃংখলা ভংগ করে তাহলে সেটিকে সাংগাঠনিক বাইয়াত নাম দিয়ে সেটির মুল্যয়ন করা যেতে পারে। আর কেউ যদি সাংগঠনের কাজ করার সময় আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) আনুগত্যের কোন বরখেলাপ করে তাহলে তার মূল্যয়ন অন্যভাবে হওয়া উচিত। তাহলে একটি বিষয় ভালো হবে, সাংগাঠনিক ভাইয়াত কেড়ে নিলেও কেউ সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেনা। তানা হলে, সংগঠনের সিন্ধান্তের বাইরে গেলে যে ইসলামের বাইরে চলে গেলো এমন একটি মনোভাব কর্মীদের মধ্যে তৈরী এবং এই কর্মীরা যখন দ্বায়িত্বশীল হয় তখন এটি আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
ইনশাল্লাহ এই বিষয় নিয়ে কুরআন এবং হাদীস নিয়ে স্ট্যাডি করার ইচ্ছে আছে।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5273376282874147