বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ শুরু হলো ৯ জানুয়ারী ২০০১ সালে। ক্লাশ শুরু হতে না হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছেলের সাথে স্টেশনবাজারের এক স্থানীয় লোকের বাত-বিতন্ডা থেকে শুরু করে ব্যাপক মারামারি শুরু হয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সাধারন ছাত্র, সব রাজনৈতিক সংগঠন একপাশে আর স্টেশনবাজার সংলগ্ন এলাকা বাসী এক পাশে। ছাত্রদের সাথে যোগ দিলো বিনোদপুরের এলাকাবাসী পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্র ধারন করলো মুহুর্তে। যারা যা আছে তা নিয়ে মারামারিতে ঝাপিয়ে পড়লো। পুরো স্টেশনবাজার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের সব দোকানপাঠ ভাংচুর করলো লুটপাট করলো সুযোগসন্ধানীরা। ফলস্বরূপ ফেব্রয়ারীর ১৬ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সববিভাগের ক্লাশ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর পড়ায় কেন জানি কোন মজা পাচ্ছিলাম না। বার বার ভাবছিলাম ইয়ার ড্রপ দিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষাটা দেই, কিন্তু ফ্যামিলির কারো এসব ব্যাপারে মাথা ব্যাথা না থাকায় এভাবে প্রথম বর্ষ পরীক্ষা দিলাম। ফলাফল মোটামুটি হলো। দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম ফলাফল ভালো ই হলো। তৃতীয় বর্ষে প্রথম থেকে পড়া শুরু করলাম মে মাসে প্রষ্তুতি ৯০ ভাগ সম্পন্ন হলো পরীক্ষা অগাষ্টে পরিকল্পনা ছিলো তৃতীয় বর্ষে বড় একটা লিড দিয়ে প্রথমের দিকে চলে আসা। দ্বিতীয় বর্ষে লিড ছিলো ২২। যাহোক মানুষের ভাবনার সাথে সব সময় সব কিছু মিলেনা। হঠাত মে মাসে ছাত্রাবাস কমিটি বললো মেস ছাড়তে হবে, তারা মেসে কিছু সংস্কারের কাজ করবে। মেসটি ছিলো মসজিদ কমিটির।
ছাত্রাবাসটি পরিবর্তন করে আর একটি ছাত্রাবাসে উঠলাম। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সিট হয়ে গেলো। ভাবছিলাম পরীক্ষার পর উঠবো। যাতে পরীক্ষায় কোন প্রভাব না পরে। কিন্তু কেনজানি হলে উঠে গেলাম। হলে উঠতেই এক বন্ধুর খপ্পড়ে পরে লাইফ লাইন (এমএলএম) বিজনেস জড়িয়ে পড়লাম। আমার রুমমেট বড় ভাই নিষেধ করেছিলেন। আমার মেসমেট বন্ধু রফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সে ও নিষেধ করেছিলো। কিন্তু সেই বন্ধুর প্রভাবে দিনের বেশিরভাগ ই কাটতে লাগলো বিনোদপুরে। যেখানে মে মাসে ৯০ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন সেখানে সেখান থেকে আর পড়া এগুলো না। এরপর সংগঠনেও জড়িয়ে পড়লাম সব ঠিক পরীক্ষার আগ মুহুর্তে ফল স্বরূপ তৃতীয় বর্ষে কিছু নম্বর কম পেলাম। প্রথম শ্রেনী থেকে কিছু কম হয়ে পড়লো। ভাবলাম একাডেমিক পড়াশোনা আর করবো না। যে ভাবা সেই কাজ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বাবা সরকারী চাকুরী করতেন সরকারী চাকুরী বিসিএস এর প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। তাই বিসিএস, এমবিএ পরীক্ষার প্রতুষ্তি নিতে থাকলাম। চতুর্থ বর্ষে ফলাফল আগের মতই থাকলো পেছন থেকে অনেকে প্রথম শ্রেনী পাইলো। আমি ঐখানেই থেকে গেলাম। কিন্তু অন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি সবার চেয়ে এগিয়ে থাকলাম।
মাস্টার্ষ এ গিয়ে বন্ধুরা বলাবলি করতে লাগলো দোষ্ত তোর প্রথম শ্রেনীটা হাতে ধরে নষ্ট করলি পড় তোর এবার হয়ে যাবে। বন্ধু নয়ন প্রায় বলতো। এদিকে সংগঠনের কাজে কিছুটা পিছিয়ে পড়লাম ফলে অনেক সময় পেলাম সময় গুলো কাজে লাগালাম ফলস্বরূপ নন-থেসিস গ্রুপ থেকে প্রথম হয়ে বেরুলাম।
ভাবলাম বিসিএস দিয়ে প্রথমের দিকের পজিশন নিতে হবে। যেহেতু আগে একটু একাডেমিক পড়াশোনা কম করেছিলাম হাতে অনেক টাইম পেতাম। আমি আবার ঘোরাঘোরি কম করতাম, আড্ডাবাজো ছিলাম না তাই সময় গুলো স্টেশনবাজারে ইন্টারনেট এ ব্যবহার করে কেটে দিতাম কিছু সময়। ফলে সহপাঠীদের চেয়ে কিছু বিষয়ে এগিয়ে থাকলাম। থেসিস করা বন্ধুরা সুইডেনে অ্যাপ্লাই করবে ভাবছিলো আমি অ্যাপ্লাই করে দিলাম। ইংলিশ কোচিং করার খুব একটা দরকার হয়নি যেহেতু একাডেমিক পড়া কম করতাম ঐ সময় গুলো ইংলিশ পড়া প্রাকটিসে কেটে দিতাম ফলে এমনি পরীক্ষা দিয়ে প্রথমভাবে মোটামুটি চলার মত স্কোর পেয়ে গেলাম সুইডেনে ভর্তির সুযোগ পেলাম। সুইডেন চলে আসলাম। কিন্তু বিসিএস দেয়ার সেই যে প্রচন্ড আকাংখা সেটি থেকে গেলো।
ভেবেছিলাম বিসিএস ক্যাডার হবো কিন্তু সেটি আর হলো না চলে আসলাম সুইডেনে।
বাকিটুকু পরের পোষ্টে……