গত রবিবার রাত ৯ টায় হঠাত মোবাইলে মেসেজ আসলো। মেসেজ ওপেন করে দেখি আমার সুপারভাইজার (সুইডিশ প্রফেসর) বাংলায় মেসেজ দিয়েছে “হালিম, আপনার গলদা চিংড়ি”
আমিতো অবাক এ আবার বাংলা পাইলো কই, ওকে জিগ্গেস করলাম যে “এটা কি লিখেছো? তুমি কি বাংলায় লিখেছ্?” সে পরের দিন মেসেজ এর উত্তর দিলো, “হ্যা বাংলায় লিখেছি, ওয়ান্ডারফুল ডিনার” smile emoticon বুঝলাম কোথাও ডিনার খেয়ে মজা পেয়ে আমারে মেসেজ দিয়েছে।
আজকে সুযোগ পেয়ে আমাকে জিগ্গেস করলো যে ঐটা (চিংড়ি) আসলে কি ছিলো। ও নিজৈ বললো যে, এটা কি তোমাদের সাগরে পাওয়া যায়।
এরপর আসল কথা বললো, “ইনডিয়ান রা নাকি সিস্তার দিকে বেশি থাকে ওরা শহরের দিকে কম। জিগ্গেস করলো, স্টকহো্লমের সব ইনডিয়ান রেস্টুরেন্টের শেফ নাকি বাংলাদেশি?? এরপর বললো ইনডিয়ান রা সনি এরিকশনে জব করে, আর বাংলাদেশিরা ইনডিয়ান রেষ্টুরেন্টের শেফগিরি করে।”
কথাগুলো খারাপ লাগলেও এর বাস্তবতা আছে। আমাদের বাংগালীদের ধৈর্য ও সহনশীলতা কম। আমরা কোন কাজে একটু শ্রম দেখলে চারদিকে তাকিয়ে ভাবি দুরের ঐ কাজ টা হয়ত সহজ, ঐটাতে হয়ত টাকা বেশি। অপেক্ষা করতে পারি খুব কমই। আমাদের সাথে বেশ কিছু ইনডিয়ান স্টুডেন্ট পড়ত। এর মধ্যে একজন ছিলো পড়াশোনায় দূর্বল। কোন রকমে মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। এরই মধ্যে একদিন তার সাথে স্টকহোল্মে দেখা, তাকে জিগ্গেস করলে বললো সে সুইজারল্যান্ড যাবে। বললাম ঐখানে কি কাজ? বলে যে প্রফেসরের সাথে কথা বলতে যাবো, জিগ্গেস করলাম তোমাকে কি ডাকছে নাকি? বললো যে, না ডাকেনি কিন্তু আমি সরাসরি গিয়ে কথা বলবো? ব্যাটার সাহস আছে বটে, ভরসা একটা তার বন্ধু পিএইচডি করে ওর সাহায্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে সরাসরি প্রফেসরকে বলবে।
আমি নিজেও খুব যে ভালো ছিলাম তা নয়, পিএইচডি জন্য লিখালেখি করে একটু হতাশ হয়ে মাস্টার্স থেসিস সুপারভাইজর কে মেইল করতাম, সে বরাবরই একটি কথা বলতো “লেগে থাকো, ছেড়ে দিওনা হয়ে যাবে”
আমরা এখানেই দূর্বল। আমরা সারাদিন দেশের চিন্তা, রাজনীতির চিন্তা আর পরিবারে টাকা পাঠানোর চিন্তায় নিজের ক্যারিয়ারের চিন্তা ভূলে যাই। শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো রেজাল্টধারী ছাত্রদের জায়গা হয় কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা কোন শারীরিক শ্রমের জায়গায়। ফলে আমরা টাকা পাঠাতে পারছি ঠিকই কিন্তু আমাদের পরিচয়ের উন্নতি হচ্ছেনা। আবার ইন্ডিয়ান ছাত্ররা সরকার থেকে শিক্ষালোন নিতে পারে যা দিয়ে তারা নিশ্চিন্তে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে যেটি আমাদের জন্য দুরাশা। দেশের যা কিছু তা তো রাজনীতিবিদদের জন্য যারা পড়াশোনা করতে চায় তাদের জন্য অস্ত্র-চাপাতি দিতে পেরে রাজনীতিবিদ দেশপ্রেমিক (?) সরকার প্রধান রা এমনভাবে কথা বলে যে যেন তাদের বাপের টাকা পয়সা দান করছে।
দেশে যদি এমন শিক্ষালোন নেয়ার ব্যবস্থা থাকতো, যদি কোন বেসরকারী ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতো উচ্চশিক্ষার জন্য লোনের সুবিধা নিয়ে তাহলে দেশের অনেক মেধাবী দেশকে মেধা দিয়ে সার্ভ করতে পারতো।