ঘৃণা থেকে সংঘাতের সৃষ্টি। আমি অমুককে ঘৃণা করি, আমি আওয়ামী ঘৃণা করি, আমি শিবির ঘৃণা করি, আমি শিয়া তাই সুন্নীকে ঘৃণা, আমি সুন্নী তাই শিয়াকে ঘৃণা করি। আমি আমরা খুবই প্রগতিবাদী কিন্তু আমি শিবির ঘৃণা করি। সব খানে শুধু ঘৃনা আর ঘৃনা। সমাজে শান্তিপূর্ণ পারস্পারিক অবস্থানের জন্য একে অপরের মত ও পথকে সন্মান করতে শিখতে হয়। আমরা অনেকেই নিজের মতকে নিজের পথকে অন্যর উপর চাপিয়ে দিতে চাই। ঐ কেন শিবির করবে, সে কেন আওয়ামীলীগ করবে, ঐ ছেলেটা অনেক খারাপ সে বাম করে। আমরা কেন পারিনা নিজের মতের প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টা চালাতে? আমরা নাকি শিক্ষিত জাতি কিন্তু কেনই বা আমরা সবাইকে নিজের মত করে ভাবি, ভাবতে চাই। অন্যকে কেনই বা আমার মতই হতে হবে? কেনই বা আমার যা ভালোলাগে অন্যকে তাই ভালোলাগতে হবে? আমরা কেন পারিনা মন থেকে উদার হতে?
কেনই বা একজন শিক্ষক শুধুমাত্র মতের পার্থক্যর কারনে তার ছাত্রকে বাকা চোখে দেখবে? কেনই বা সমাজের একজন মেধাবী মানুষ অপর একজন মেধাবী মানুষকে শুধুমাত্র মতের পার্থক্যের কারনে ঘৃণা করবে। বলা হয় “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়”। তাহলে কি আমরা ভূল শিখি, বা আমরা যা শিখি তা ধারন করিনা, করতে পারি না। আর আমরা তা ধারন করতেও হয়ত জানিনা, আর জানিনা বলেও সেই ছোট বেলা থেকে আমরা পড়ি “মিথ্যা বলা মহাপাপ” কিন্তু আমাদের জীবন শুরু মিথ্যা দিয়ে নিজের কাছে নিজের প্রতরনা দিয়ে। আমরা মুখে যা বলি তাই কি আমরা অন্তরে বিশ্বাস করি বা ধারন করি?? খুব স্মার্টলি বলি যে, আমি খোলা মনের, কিন্তু আসলে আমরা কি বুঝি খোলা মন শব্দটার মানে কি??
এসব হিসেব মিলাতে পারি না, তখন যখন দেখি খোলা মনের মানুষরা সংকীর্ণতার বেড়াজালে বন্দী, সমাজে নিজের মত করে চলা বলতে কিছু নেই, কারো না কারো চলা পথেই হাটতে হয়। মানুষ নিজের মুখ ঢাকতে চায় কিন্তু বেড়িয়ে পড়ে কোন না কোনভাবে। কোন এক মনীষী বলেছিলেন মানুষ রাজনৈতিক জীব, মানুষ কোন না কোন মত বা পথকে সমর্থন করে, করতে হয়। কিন্তু সব মানুষই সাহসী হয় না নিজের চরিত্রকে প্রকাশ করতে, কারন মানুষের কাছে যেটি তার দূর্বলতা সেটি সে লুকিয়ে করতে পছন্দ করে। কোন কোন মানুষের কাছে রাজনৈতিক অবস্থান হলো নিজের চরিত্রের দূর্বলতা প্রকাশের নামান্তর, কারন সে যেটি পছন্দ করে সে বিষয়ে সে কনফিডেন্স না ফলে মানুষ সেটি প্রকাশে ভয় পায়।
মানুষে মানুষে ঘৃণা করাটা ইসলাম তো নয়ই কোন ধর্মের ই শিক্ষা নয়, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যারা ধর্মের ব্যাপারে কঠোর না বা ধর্মের বিরোধীতা করে এমন শ্রেনীর মধ্যে মানুষের প্রতি ঘৃণা কোন অংশেই কম না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের চিত্র বলেন আর ২০০৬ সালের ঢাকার রাজপথ বলেন সবটিতে এর প্রমান পাওয়া যায়। সুতরাং যারা ধার্মিক সম্প্রদায়কে কঠাক্ষ করে নিজেদের অবস্থানকে উপরে তুলতে চায় তারা খারাপ না হোক তার পাশের জনের তুলনায় হয়ত খুব বেশি ভালো না।
মানুষে মানুষে ঘৃণা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রানী থেকে সর্বনিকৃষ্ট প্রানীতে পরিনত করে। ২০০৬ সালে যখন ঢাকার রাজপথে দিনের আলোয় মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যখন বিশ্বজিত নামক নিরিহ মানুষের রক্তে প্রগতিবাদীদের গায়ের জামা লাল হয়ে উঠে, যখন হেফাজতের হাজারো মানুষের রক্তে ঢাকার কালো রাজপথ লাল হয়ে যায়, তখন প্রগতিবাদ হেরে যায় মনুষ্যবাদের কাছে, শান্তিময় ইসলামের কাছে। ইসলাম মানুষে মানুষে ভালোবাসা শিখিয়েছে, ইসলাম শৃংখলিত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছে, ইসলাম এই জগতকে আলোকিত করেছে।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের ভিন্নতা যেন আমাদের পারষ্পারিক ঘৃণার কারন না হয় এই কামনাই করি। রাজনৈতিক মতের পার্থক্য যাতে নির্যাতন ও নিষ্পাসনের কারন হয়ে দাড়ায় সেই কামনায় করি। অপরাধীর কোন মত নেই বা পথ নেই, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করাই উচিত।
সবশেষে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মানুষ গুলোকে আরো সহনশীল এবং উন্নতরুচির মানুষ হিসেবে কামনা করি। উন্নত রুচি এই কারনেই যে, এমন উগ্র নেশাগ্রস্থ বর্ণবাদী মানুষ আফ্রিকা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতের পার্থক্যের কারনে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাস করে, যারা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে মনের দাবীকে স্লোগানে পরিনত করে।
“উন্নত হোক চিত্ত মোদের, জাগ্রত হোক বিবেক
এসো মোরা এক হই ভুলে সব বিভেদ”