Month: ডিসেম্বর 2014
আত্না বা রূহের পুষ্টি
গত সপ্তাহে তারবিয়াহ প্রোগ্রামের যে কয়েকটি কথা ভালো লেগেছিলো।
মাওলানা সাইফুদ্দীন সাহেব কথাগুলো বলেছিলেন শরীর এবং নফস (আত্বনা) এর কথা বলতে গিয়ে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের শরীর তৈরী করেছেন মাটি দিয়ে। আর এই মাটির তৈরী শরীরের জন্য যা পুষ্টি দরকার সেগুলো মাটি থেকেই উতপন্ন হয়। আমরা সেগুলো গ্রহন করে শরীরকে সুষ্থ্য রাখি, মৃত্যুর পর মাটির তৈরী শরীর মাটিতে মিশে যায়।
মজার বিষয় হলো আল্লাহ মানুষের রুহ (আত্না) কে মাটি দিয়ে তৈরী করেননি। আর তাই রুহ (আত্নার) আত্নার জন্য খাদ্য বা পুষ্টি মাটি থেকে আসেনা। শরীরের জন্য যেমন পুষ্টির দরকার হয়, ঠিক তেমনি আত্নার পুষ্টির জন্য দরকার পুষ্টি। আর আত্নার পুষটি আসে জ্ঞান থেকে। আর এক্ষেত্রে ওহীর জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আবার শরীরের পুষ্টির মধ্যে যেমন ভেজাল আছে ঠিক তেমনি আত্নার পুষ্টির মধ্যে ও ভেজাল থাকে। ওহীর জ্ঞানের উপর নির্ভর করেই হয়ত জান্নাতে রুহেরা মর্যাদা লাভ করে। আবার ওহীর জ্ঞানের সাথে সেই জ্ঞানের আমলের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং রুহ্ বা আত্নাকে সুষ্থ ও সবল রাখতে হলে ওহীর জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আত্নাকে সবল না রাখতে পারলে নফসের খায়েসের কাছে পরাজিত হতে হয়, এভাবে বার বার পরাজয়ের ফলে নফসের গোলামী করে যেতে হয়। ফলে রুহ বা আত্না তার জান্নাতী মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। মানুষ ভাল-মন্দের বিচারবোধ হারিয়ে ফেলে।
প্রত্যেকটি মানুষের জন্য রুহ্ বা আত্নার সুস্থ্যতার জন্য ওহীর জ্ঞান অর্জন করা খুবই জরূরী। রুহ্এর সূস্থ্যতা মানুষের জীবনে শান্তি নিয়ে আসে এবং মানুষ কল্যান লাভ করে।
প্রশ্ন হতে পারে তাহলে জ্ঞানের উতস ই বা কি?
জ্ঞানের উতস হলো আল-কুরআনের জ্ঞান বা ওহীর জ্ঞান। আল্লা রাব্বুল আলামিন সর্ডজ্ঞানী তিনি জ্ঞানের আধার। সুতরাং জ্ঞানের উতস হলো আল্লাহর দেয়া জ্ঞান। সুতরাং এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছুই নেই যে, বিজ্ঞানের চর্চাও একটি আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের মধ্যে ই পড়ে। তবে সেই জ্ঞানের চর্চার সফলতা নির্ভর করে বিজ্ঞানকে আমরা কোন কাজে ব্যবহার করছি।
আসুন আত্নাকে সু্স্থ্য রাখার জন্য এবং আত্নার পরিশুদ্ধির জন্য আমরা ওহীর জ্ঞান অর্জন এবং তার চর্চা করি।
আনুগত্য মানেই কি নেতার সামনে কাচুমাচু করে কথা বলা?
গত সপ্তাহে ইক্বমাতে দ্বীন বইয়ের উপর আলোচনা হচ্ছিলো সে আলোচনাতে আনুগত্যকে একটু অন্যভাবে বলা যায় ধরাবাধা আলোচনার বাইরে গিয়ে একটু গভীর আলোচনা করা হয়। আমার কাছে আনুগত্যের সেই ধরনটিই আসল আনুগত্য মনে হয়েছিলো।
আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
১) আনুগত্য হতে হবে বাইডিরেক্শনাল
আমীর/লিডার যেমন কর্মীর আনুগত্য কামনা করবে ঠিক তেমনি লিডারকেও কর্মীর ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে, কর্মীর খোজ খবর নেয়া, ভালো-মন্দের খবর নেয়াও আমীর/লিডারের দায়িত্ব। আমীর/লিডার বা দ্বায়িত্বশীলকে সব সময় মনে রাখতে হবে তিনি শুধুমাত্র আল্লাহর বিধানকে সমুন্নত রাখতেই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
২) আমীর/লিডার এর আনুগত্যের মান আর রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্যের মানের সমান নয়।
প্রথমটির ক্ষেত্রে কর্মীরা কোন সমস্যা দেখলে আমীরকে প্রশ্ন করতে পারে বা এখানে আনুগত্যের ব্যাপারে আমীর/লিডার প্রশ্নের উর্ধে নয় কিন্তু রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্যের হলো আবশ্যক এবং নিঃশর্ত সেখানে প্রশ্নের কোন সুযোগ নেই কারন তিনি সরাসরি আল্লাহ থেকে ওহী প্রাপ্ত।
উদাহরন হিসেবে বলা যায়, হযরত উমর (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন তিনি ভরা মজলিসে অন্য সাহাবা (রাঃ) এর দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
৩) আনুগত্য করতে গিয়ে কর্মীদের স্বতন্ত্র স্বত্তাকে বিকিয়ে দেয়া যাবেনা বা নষ্ট করা যাবেনা।
অনেক সময় দেখা যায় আনুগত্য করতে গিয়ে জ্বি-হুজুর মার্কা আনুগত্য শুরু হয়ে যায়। দ্বায়িত্বশীল কি ভাববেন মনে করে অনেক সময় ইসলামের অনেক বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়, এমন কিছু করা যাবে না। ন্যায় কথা বলার সময় ও নাকি কাচুমাচু করতে হবে এমন একটি ধারনা চর্চা করা হয়। কর্মীদের দ্বায়িত্ব হলো আনুগত্যের জন্য সব সময় আল্লাহর উদ্দেশ্য কথাটি মনে রাখা এবং নেতাদের ভূল ধরিয়ে দেয়া।
৪) আনুগত্য একটি কনসেপ্ট,
আনুগত্য মানেই এই না যে, নেতাকে দেখলেই কাচুমাচু করে দাড়াতে হবে, আনুগত্য মানে এই না যে নেতা যা বলবে অন্ধভাবে তাই পালন করতে হবে, আনুগত্য মানে এই না যে, নেতার সামনে হক কথা বলতেই লজ্জ্বায় কাচুমাচু করতে হবে। আনুগত্য মানেই হলো আল্লাহকে সন্টুষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর দেয়া কোন বিধান পালনের জন্য নেতার আদেশের আনুগত্য করা।
প্রচলিত সিস্টেমে ইসলামি আনুগত্য র দেশীয় ট্রাডিশনকে মিক্সড করে একটি ভিন্ন রকমের আনুগত্যের চর্চা করা হয়। দেশীয় ট্রাডিশনে গুরুজনের সামনে মাথা উচু করে কথা বলা যাবেনা এমন মনে করা হয়, গুরুজনেরা ভূল বললেও সেটির প্রতিবাদ করা যাবেনা বা গেলেও সেটি না মানলে কিছু বলা যাবেনা। আবার দ্বায়িত্বশীল রা আনুগত্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক সময় সূরা হুজুরাতের কিছু আয়াত তেলওয়াত করে বলে থাকেন যে নেতার চেয়ে গলার স্বর উচু করা যাবেনা। এখানে এটি চিন্তার দাবি রাখে যে সূরায় শুধু রাসুল (সাঃ) এর জন্য বলা হয়েছে নাকি দ্বায়িত্বশীলদের জন্য কারন বর্তমান সময়ে সূরা হুজুরাতের উদাহরন শুধু দায়িত্বশীলদের আনুগত্যের জন্য দেয়া হয়ে থাকে। দ্বায়িত্বশীল রা যদি কোন অন্যায় সিন্ধান্ত নেন এবং কর্মীরা যদি সে বিষয়ে নিজেদের সঠিক অবস্থান জোড়ালোভাবে তুলে ধরেন সেক্ষেত্রে আনুগত্যের বরখেলাপ হয় কিনা বিষয়টি অবশ্যই একটি আলোচনার বিষয় ।
আবার অনেক সময় সংগঠনের ভালো চিন্তার কথা বলে অনেক কিছু চেপে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যায় সেগুলো ইসলামী আনুগত্যের মধ্যে পড়ে কিনা ভাবার বিষয়।
দেশীয় ট্রাডিশন এইজন্য বললাম যে, অনেক সময় দেখা যায় গ্রামে দু-বংশের ঝগড়া লাগলে যদি নিজ বংশের কেউ অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান করা হলে সেটি হয়ে যায় বংশের আনুগত্যের বরখেলাপ।
ইক্বামাতের দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির নৈতিক উন্নয়নের চেয়ে যখন রাষ্ট্রীয় ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, তখন ভংগুর নৈতিক মান নিয়ে কর্মীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম কায়েমের জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে হয় এবং সেটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারনে ব্যক্তির ঈমানী মান এবং আনুগত্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে সব সময় লক্ষ্য দিতে সফল না হওয়ার কারনে সাংগাঠনিক আনুগত্যের কারনে ইসলামী আনুগত্যের বরখেলাপ হয়ে যেতে পারে। রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) এর যুগের ঈমান আর আল্লাহর উপর তায়াক্কুল করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের মুসলিমদের অবস্থান অনেক অনেক গুন নিচে। এমন অবস্থায় ব্যক্তির মানুষ হিসেবে রাগ-ক্রোধকে সংবরন করার যোগ্যতা অনেক কম থাকে, আবার অন্যের দ্বারা প্রভাবিত বা আবেগ দ্বারা তাড়িত হওয়ার প্রবনতাও বেশি থাকে এমন অবস্থায় রাজনৈতিক বা সাংগাঠনিক আনুগত্যের বিষয়গুলী অনেক গুরুত্ববহন করে কারন এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা দলীয় শক্তি থাকায় ব্যক্তি মানুষের দ্বারা অতি সহজেই অন্যায় সম্পাদিত হতে পারে।
সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনের দ্বায়িত্বশীল এবং কর্মীদের জন্য আনুগত্য ও ইক্বামাতে দ্বীনের আলোচনা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একান্ত ভাবনা
সেদিন ল্যাবে একজন অ্যাসোসিয়েট প্রেফেসর এসেছিলেন উনি খন্ড কালীন শিক্ষকতা করেন কুর্দিস্তানে। সে সুইডেনের এক ফার্মা কোম্পানীতে অনেকদিন জব করেছে। এখন সে আমাদের গ্রুপের সাথেও কাজ করে। আমাদের গ্রুপ লিডার তাকে জিজ্ঞেস করলো যে, সেখানে শিক্ষার কি অবস্থা। সে জবাব দিলো যে, এ্যাডুকেশন অনেক ভালো কিন্তু গবেষনাতে ফান্ডা নেই। এরপর সে একটি কমেন্ট করেছিলো
“বললো যে বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় একই কোর্স লিটারেচার ফলো করা হয়, পার্থক্য হলো সেই লিটারেচার কিভাবে পড়ানো হয় তার উপর”
লেহনিনজারের বায়োকেমিষ্ট্রে ই পড়েই অনেক অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী তৈরী হয়, আবার সেই একই বই পড়ে প্রাইমারী স্কুলের টিচার ও হয়।
একই কথা কুরআনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একই কুরআন পড়ে আলকায়েদা, তালেবান তৈরী হয়, আবার সেই কুরআনের কারনেই আরবের অন্ধকার যুগের মানুষগুলো সর্বকালের সম্মানিত মানুষে পরিনত হয়েছেন। ঠিক একই কুরাআন পড়ে মুসলিম ও ইসলাম বিরোধী কথা বলেও নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে।
ইংল্যান্ডে মুসলিমদের মধ্যে ইসলাম পালনের প্রবনতা দেখে সেখানকার এক পত্রিকায় বলা হয়েছিলো, মুসলিমদের শিশুদের মধ্যে অ্যারাবীক ট্রাডিশনের খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে, কারন এই খাবার গুলো বাচ্চাদের মানসিকতা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
আসলে বাস্তবতাও তাই, ইসলাম শুধু মাত্র নামাজ আর রোজা নয়, ইসলাম হলো আপনার চিন্তা, আপনার অভ্যস, আপনার ভালোলাগা, আপনার শরীরের পুষ্টি, আপনি কিভাবে সেগুলো ব্যবকার করছেন, কি ব্যবার করছেন তার উপর নির্ভর করে ব্যক্তিহিসেবে ইসলামে আপনার অবস্থান। পুষ্টিতে যদি অন্য কিছু ঢুকে যায়, আপনার চিন্তা দূষিত হতে বাধ্য, আপনার জীবন যাপন যদি ইচ্ছেমত হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিজীবন আর মুসলিম জীবন থাকেনা।
সুতরাং নিজেকে মুসলিম হিসেবে কল্পনা করতে হলে, নিজেকে কুরাআনের আলোকে গঠন করতে হবে, কুরআন থেকে আল্লাহর নির্দেশই নিতে হবে, এবং সবটুকুই নিতে হবে।
একটি শান্তিময় মুসলিম সমাজ গঠনে কুরআন অধ্যয়নের পদ্ধতির উপর জোড় দেয়া উচিত। বুঝার ভিন্নতা, চিন্তার চিন্নতা তৈরী করে, আর এভাবে তৈরী হয় মতবাদের ভিন্নতা।
আল্লাহ আমাদের কুরআনকে কুরআনের মত করেই বুঝার তৌফিক দান করুন।
“উন্নত হোক চিত্ত মোদের, জাগ্রত হোক বিবেক, এসো মোরা এক হই ভুলে সব বিভেদ”
ঘৃণা থেকে সংঘাতের সৃষ্টি। আমি অমুককে ঘৃণা করি, আমি আওয়ামী ঘৃণা করি, আমি শিবির ঘৃণা করি, আমি শিয়া তাই সুন্নীকে ঘৃণা, আমি সুন্নী তাই শিয়াকে ঘৃণা করি। আমি আমরা খুবই প্রগতিবাদী কিন্তু আমি শিবির ঘৃণা করি। সব খানে শুধু ঘৃনা আর ঘৃনা। সমাজে শান্তিপূর্ণ পারস্পারিক অবস্থানের জন্য একে অপরের মত ও পথকে সন্মান করতে শিখতে হয়। আমরা অনেকেই নিজের মতকে নিজের পথকে অন্যর উপর চাপিয়ে দিতে চাই। ঐ কেন শিবির করবে, সে কেন আওয়ামীলীগ করবে, ঐ ছেলেটা অনেক খারাপ সে বাম করে। আমরা কেন পারিনা নিজের মতের প্রতিষ্ঠায় শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টা চালাতে? আমরা নাকি শিক্ষিত জাতি কিন্তু কেনই বা আমরা সবাইকে নিজের মত করে ভাবি, ভাবতে চাই। অন্যকে কেনই বা আমার মতই হতে হবে? কেনই বা আমার যা ভালোলাগে অন্যকে তাই ভালোলাগতে হবে? আমরা কেন পারিনা মন থেকে উদার হতে?
কেনই বা একজন শিক্ষক শুধুমাত্র মতের পার্থক্যর কারনে তার ছাত্রকে বাকা চোখে দেখবে? কেনই বা সমাজের একজন মেধাবী মানুষ অপর একজন মেধাবী মানুষকে শুধুমাত্র মতের পার্থক্যের কারনে ঘৃণা করবে। বলা হয় “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়”। তাহলে কি আমরা ভূল শিখি, বা আমরা যা শিখি তা ধারন করিনা, করতে পারি না। আর আমরা তা ধারন করতেও হয়ত জানিনা, আর জানিনা বলেও সেই ছোট বেলা থেকে আমরা পড়ি “মিথ্যা বলা মহাপাপ” কিন্তু আমাদের জীবন শুরু মিথ্যা দিয়ে নিজের কাছে নিজের প্রতরনা দিয়ে। আমরা মুখে যা বলি তাই কি আমরা অন্তরে বিশ্বাস করি বা ধারন করি?? খুব স্মার্টলি বলি যে, আমি খোলা মনের, কিন্তু আসলে আমরা কি বুঝি খোলা মন শব্দটার মানে কি??
এসব হিসেব মিলাতে পারি না, তখন যখন দেখি খোলা মনের মানুষরা সংকীর্ণতার বেড়াজালে বন্দী, সমাজে নিজের মত করে চলা বলতে কিছু নেই, কারো না কারো চলা পথেই হাটতে হয়। মানুষ নিজের মুখ ঢাকতে চায় কিন্তু বেড়িয়ে পড়ে কোন না কোনভাবে। কোন এক মনীষী বলেছিলেন মানুষ রাজনৈতিক জীব, মানুষ কোন না কোন মত বা পথকে সমর্থন করে, করতে হয়। কিন্তু সব মানুষই সাহসী হয় না নিজের চরিত্রকে প্রকাশ করতে, কারন মানুষের কাছে যেটি তার দূর্বলতা সেটি সে লুকিয়ে করতে পছন্দ করে। কোন কোন মানুষের কাছে রাজনৈতিক অবস্থান হলো নিজের চরিত্রের দূর্বলতা প্রকাশের নামান্তর, কারন সে যেটি পছন্দ করে সে বিষয়ে সে কনফিডেন্স না ফলে মানুষ সেটি প্রকাশে ভয় পায়।
মানুষে মানুষে ঘৃণা করাটা ইসলাম তো নয়ই কোন ধর্মের ই শিক্ষা নয়, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যারা ধর্মের ব্যাপারে কঠোর না বা ধর্মের বিরোধীতা করে এমন শ্রেনীর মধ্যে মানুষের প্রতি ঘৃণা কোন অংশেই কম না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের চিত্র বলেন আর ২০০৬ সালের ঢাকার রাজপথ বলেন সবটিতে এর প্রমান পাওয়া যায়। সুতরাং যারা ধার্মিক সম্প্রদায়কে কঠাক্ষ করে নিজেদের অবস্থানকে উপরে তুলতে চায় তারা খারাপ না হোক তার পাশের জনের তুলনায় হয়ত খুব বেশি ভালো না।
মানুষে মানুষে ঘৃণা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রানী থেকে সর্বনিকৃষ্ট প্রানীতে পরিনত করে। ২০০৬ সালে যখন ঢাকার রাজপথে দিনের আলোয় মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যখন বিশ্বজিত নামক নিরিহ মানুষের রক্তে প্রগতিবাদীদের গায়ের জামা লাল হয়ে উঠে, যখন হেফাজতের হাজারো মানুষের রক্তে ঢাকার কালো রাজপথ লাল হয়ে যায়, তখন প্রগতিবাদ হেরে যায় মনুষ্যবাদের কাছে, শান্তিময় ইসলামের কাছে। ইসলাম মানুষে মানুষে ভালোবাসা শিখিয়েছে, ইসলাম শৃংখলিত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছে, ইসলাম এই জগতকে আলোকিত করেছে।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের ভিন্নতা যেন আমাদের পারষ্পারিক ঘৃণার কারন না হয় এই কামনাই করি। রাজনৈতিক মতের পার্থক্য যাতে নির্যাতন ও নিষ্পাসনের কারন হয়ে দাড়ায় সেই কামনায় করি। অপরাধীর কোন মত নেই বা পথ নেই, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করাই উচিত।
সবশেষে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মানুষ গুলোকে আরো সহনশীল এবং উন্নতরুচির মানুষ হিসেবে কামনা করি। উন্নত রুচি এই কারনেই যে, এমন উগ্র নেশাগ্রস্থ বর্ণবাদী মানুষ আফ্রিকা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। যারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতের পার্থক্যের কারনে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাস করে, যারা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে মনের দাবীকে স্লোগানে পরিনত করে।
“উন্নত হোক চিত্ত মোদের, জাগ্রত হোক বিবেক
এসো মোরা এক হই ভুলে সব বিভেদ”
বিজয় দিবসের কবিতা
বিজয় তুমি এসেছিলে
দিয়েছিলে ধরা
বিজয়ের ৪৩ বছরেও শহীদদের রক্ত
তেল হয়ে পানি করে ঘোলা।
লক্ষ তরুন দিয়েছিলো জীবন
দেশকে ভালোবেসে
তাদের জীবনের দামে কেনা সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য
আজ পচা মাছ হয়ে উঠে ভেসে।
ছিলো দেশপ্রেমের ফাকা বুলি আর
পাক হায়েনাদের আগুনের গুলি
দেশপ্রেমের কথা বলে ভারতে লুকিয়েছিলো যারা
তাদের কথা মোরা কেমনে ভূলি??
তাদের হাতে বন্দী বিজয়, বন্দী স্বাধীনতা
কবে পাবো প্রভূ মোরা উমরের মত নেতা??
শুধু ১৬ কোটি মানুষ না, দেশের পশুপাখি গাছ-পালা, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও আজ বন্দী হয়ে পড়েছে।
জাগো তরুন বাচাও দেশ,
লুটে পুটে খেয়ে দেশটাকে করে দিবে শেষ।
বিজয় মাসের ভাবনা
প্রেম ভালোবাসা যত বেশিনা বাহ্যিক তার চেয়ে বেশি আত্নিক। ভালোবাসা একটি অনুভূতি, একটি অনুভবের বিষয় যে অনুভূতি মানুষকে সর্বদা জাগ্রত রাখে ভালোবাসার জিনিসটির প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রতির প্রতি তার দ্বায়িত্বানুভূতিতে। বাংলাদেশে ঈদের জামায়াতে, কিংবা শুক্রবারের নামাজে যেমন মুসলমানের সংখ্যা দেখে অভিভূত হতে হয় ঠিক তেমনি ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ সে মার্চে দেশপ্রেমিক মানুষের সংখ্যা দেখে অভিভূত হতে হয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ভালোবাসর যে পরিবেশ তৈরী হয়, তা দেখে আগ্রাসী শক্তির বুকে হয়ত কাপন ধরে যায় সে দিনটির জন্য।
দেশকে ভালোবাসার প্রতিকীস্বরূপ পতাকাকে সন্মান করতে শেখানো একটি জাতিগত ট্রাডিশনের পরিনত হয়েছে। দেশের প্রায় বেশিরভাগ স্কুল কলেজ গুলোতে জাতীয় পতাকাকে সন্মান দেখানো, স্যালুট জানানো একটি নিত্য দিনের দ্বায়িত্ব। অথচ পশ্চিমাদেশগুলোতে স্কুল কিংবা কলেজে পতাকাকে প্রতিদিন স্যালুট দেয়া হয়ত শেখানো হয় না। তবে এখানে সবার মনের মধ্যে দেশেপ্রেমের পরিবেশ তৈরী করে দেয়া হয়, যেটি হয়ত বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।
জার্মানী জাতির কোন সদস্যের সংস্পর্শে আসলে অনেকেই বুঝে যায় এরা কতবড় জাতিপ্রেমিক, প্রয়োজন না হলে এরা ইংলিশে কথা বলেনা, ঠিক তেমনি অনেক সুইডিশ আছে প্রয়োজন ছাড়া ইংলিশ বলে না, অথচ এরা যে ইংলিশ এ অনেক পারদর্শী সেটা কথা বলা শুরু করলে বুঝা যায়।
অপর পক্ষে আমরা বাংলাদেশিরা দেশপ্রেমের যে আবেগ নিয়ে চলি, তার সিকিআনা পরিমানও আমাদের কাজে প্রকাশ পায় না। আমরা বাংলাভাষায় কথা না বলতেই পারলেই নিজেদের স্মার্ট ভাবি।
বেশকিছুদিন আগে এক সুইডিশ বাংগালীর সাথে কথা হচ্ছিলো, কথায় কথায় তিনি বললেন, তার লাল পাসপোর্ট আছে (যারা সুইডিশ তাদের পাসপোর্ট লাল হয়), তিনি আরো বললেন তিনি সুইডিশ। আমি একটু ফান করার জন্য বললাম যে আপনিতো বাংলাদেশি, উনি তখন জোড় দিয়ে বললেন যে না, আমার লাল পাসপোর্ট আছে, আমি সুইডিশ। এটি হলো আমাদের দেশপ্রেমের একটি উদাহরন। আমরা সর্বদা চেষ্টা করি কিভাবে বাংলাদেশি পরিচয় লুকিয়ে বেচে থাকা যায়। হয়ত সবাই করে না তবে বেশির ভাগে যে করা সেটি নিজেদের অন্তরকে প্রশ্ন করলেই বুঝা যাবে। অথচ এইরকম দেশপ্রেম নিয়ে আমরা অনেক গর্বিত, নিজেদের অনন্যা জাতি ভেবে স্বপ্ন দেশি, আহা আমরা কতই না গর্বিত জাতি।
দেশপ্রেমের শিক্ষা নেই আমরা অপরকে ঘৃণা করার মধ্য দিয়ে, যদি অন্যকে ঘৃণা না করতে না পারি তাহলে যেন আমাদের দেশপ্রেমের কোন প্রকাশই ঘটেনা। যে জাতি যত নিচু তাদের মধ্যে শ্রেনীগত দ্বন্দ তৈরী হয় ফলস্শুতিতে তারা একে অপরকে এক ভাই আর ভাইকে এক বন্ধু আর এক বন্ধুকে ঘৃণা করে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটায়।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও বাংলাদেশের তরুন প্রজন্মের মন মানসিকতার উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হয় নি। দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতির চর্চা আমাদের তরুন সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষেত্রকে আরো বিস্তৃত করছে। জাতি এগিয়ে যাচ্ছে পেছনের দিকে।
বিজয়ের এই মাসে যারা তরুন বাংলাদেশি, যারা জাতির ভবিষ্যত, তারা সবাই বিভেদ ভূলে গিয়ে, সম্মিলিতভাবে জাতিগত পরিচয়কে কিভাবে সমুন্নত করা যায় সেই চেষ্টাই করুক, জাতিগত প্রশ্নে সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করুক, সবাই নিজেদের আদর্শের চেয়ে নিজ দেশের স্বার্থ এবং জাতিগত পরিচয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার শপথ নিক, এটাই হোক বিজয় দিবসের কামনা, এটাই হোক বিজয় মাসের প্রেরনা। এই প্রেরনা বেচে থাক যুগ যুগ সবার মাঝে। আমরা আবার বাংগালী থেকে মানুষ হই, সেই কামনা করি।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!! দেশপ্রেমিক জনতা জিন্দাবাদ!
আজকের বাংগালী আইটেম ছড়া
যাহারা ভাবিছেন বিদেশে বসিয়া না হয় খাচ্ছে খাক
দেশি চানাচুর আর মুড়ি
কিন্তু তাই বলে কি করে সম্ভব ডালপুড়ি??
তাহাদের বলি ভাই আমরা বাংগালী জাত
মাঝে মাঝে ই চলে কাচামরিচ আর পান্তাভাত।
বাংগালীরা ভোজন রসিক তাই
২০০-৩০০ পাড়ি দিয়ে কিনে বাংগালী খাবার
রান্না হলে পরে মুহুর্তেই হয়ে যায় শাবার
দেশে বসিয়া যাহারা ভাবিছেন আমাদের আছে
রাস্তার ধারে টি-স্টল আর মিষ্টি হাড়ি হাড়ি
আমাদের এখানে বাংগালী প্রোগ্রামে পাওয়া যায়
পিয়াজু-সন্দেশ আর মিষ্টি বাড়ি বাড়ি
শীতের পিঠা খেয়ে যাহারা হাসছেন তৃপ্তির হাসি
তাহাদের বলি
আমরাও খাই চিনিগুড়া চালের পোলাও আর খাসি।
দেশে-বিদেশে বসিয়া যাহারা খুজছেন সূখের অনুভূতি
নিজের ভেতরে তাহা তালাশ করুন
পেয়ে যাবেন সূখের দ্যুতি।
ভাবনা প্রতিদিন
আমরা ছোটবেলা থেকে যা কিছু শিখেছি তার বেশিরভাগ ই থিওরী। প্রাকটিক্যাল নলেজ আমাদের শিশু এবং তরুনদের দেয়া হয় খুবই কম।
যেমন: আমরা ছোট বেলায় পড়েছি রাস্তা পাড় হতে হবে জেব্রা ক্রোসিং দিয়ে, কিন্তু কখনই জেব্রাক্রোসিং টা কি বাচ্চাদের/ছাত্রদের সাথে করে নিয়ে গিয়ে দেখানো হয় না।
আবার স্কুলে অনেক কিছু শেখানো হয় থিওরী যা একটু ইচ্ছে আর উদ্যেগ নিলেই হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া যায়। এক্ষেত্রে স্কুল কলেজের স্যারদের এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের উদ্যেগে আগামী প্রজন্মকে যুগোপযোগী শিক্ষা দিলে আগামীর প্রজন্ম বিশ্বে জায়গা করে নিতে পারবেই সহজেই।
দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে এসে দেখলাম এখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের লাইন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাকটিক্যাল কিছু শিক্ষা দিতে।
যেমনঃ
১) ব্যস্ত রাস্তা কিভাবে পাড় হতে হবে।
২) ময়লা/আবর্জনা কোথায় ফেলতে হবে।
৩) টয়লেট কিভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৪) দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই ছোটবেলায় স্কুলে শেখানো হয়।
ঠিক তেমনি একাডেমিক সেক্টরে থিওরীর সাথে প্রাকটিক্যাল করানো হয় বেশি বেশি। বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময় টাকার অজুহাত দেখানো হয়। আসলে টাকার চেয়ে বড় জিনিস হলো তরুন প্রজন্মকে নিয়ে ভালো চিন্তা আর একটু উদ্যেগ। এই জিনিস দুটি থাকলে স্বল্প ব্যয়ে একটি আধুনিক শিক্ষিত সমাজ তৈরী করা যায় খুব সহজে।
সায়েন্সের বিষয়গুলিতে অল্পকিছু ব্যয় করলেই অনেক প্রাকটিক্যাল জিনিস শেখানো যায়।
সম্প্রতি (২০০৭) সালে ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিলো একটি সুন্দর নিবন্ধ যেখানে দেখানো হয়েছে টাকা কম থাকলেও কিভাবে সায়েন্স শেখা যায়। সেখানে বাজেট স্ব্ল্পতায় বাশের তৈরী মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে স্কুল কলেজের ছাত্ররা খুব সহজেই অনেক বিষয়ে প্রাকটিক্যাল নলেজ আহরন করতে পারে। এরকম এক একটি মাইক্রোস্কোপের মূল্য ভারতের ১৫০ রুপী মাত্র।
Microscopes made from bamboo bring biology into focus
http://www.nature.com/…/jour…/v13/n10/full/nm1007-1128a.html
“”The microscope has opened up a whole new world for these children,” says Deb. “They could never have imagined that an ant could have tiny antennae or that dragonfly wings could have such beautiful and intricate patterns.”
চিন্তা করুন এরকম আরো অনেক কিছু হোমমেইড জিনিস দিয়ে ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করতে পারলে স্ব্লপ বাজেটে শিক্ষার্থীদের হাতে এসব জিনিস তুলে দেয়া যাবে।
আমার মনেহয় শিক্ষকদের মধ্যে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা তৈরী হলে ছাত্রদের মধয়ে ও সেটি সন্চারিত হবে সহজেই। আর আমরা সবাই চাই বাংলাদেশের নামটি বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে। এটি সম্ভব কেবল একটি সুন্দর এবং শিক্ষিত জাতি তৈরীর মাধ্যমে আর সেখানে শিক্ষকদের ভূমিকা অন্য সবার চেয়ে বেশি।