কথাটি বলেছিলেন আমাদের সবার প্রিয় কামরুন্নাহার ম্যাডাম। প্রতিদিন সকালে স্কুলে ঢুকলেই একটু পর ডি-বক্সে দাঁড়াতে হত পিটি করতে। কবীর স্যার একদিকে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন। স্যারের কাজ ছিলো কেউ শার্ট ইন করেছে কিনা্? জুতা পরেছে কিনা, বেল্ট আছে কিনা স্কুল ইউনিফরম পড়ে এসেছে কিনা এসব দেখা। পিটি শেষে যখন সবাই লাইন ধরে বিল্ডিং এর ভেতরে প্রবেশ করতাম তখন অনেক সময় স্যার ম্যাডামেরা দাড়িয়ে থাকতেন। আমি বরাবরই শার্ট ইন করা পছন্দ করতাম না। একদিন পিটি শেষে শার্ট আগের অবস্থায় রেখে দিলাম, সবাই লাইন ধরে স্কুল বিল্ডিংএ প্রবেশ করার সময় ম্যাডাম দেখলেন আমার শার্ট ইন করা নেই।
সেদিন বললেন যে, “হালিম শার্ট ইন করার অভ্যস করো, নয়ত এটা তোমার ঘাটতি থেকে যাবে”।
সেই ঘাটতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
নাহার ম্যাডাম সবাইকে নিজের বাচ্চার মত দেখতেন। উনাকে সবাই অনেক শ্রদ্ধা করতো। কারন উনার মধ্যে শিক্ষকের চেয়ে বড় গুন ছিলো যে উনি যা কিছু বলতেন আন্তরিকতা নিয়ে বলতেন এবং সবাইকে সমানভাবে দেখতেন।
ম্যাডামের বাসায় আমরা প্রাইভেট পড়তে যেতাম সকাল ৮ তার দিকে। ম্যাডাম আমাদের সাথে বসতেন আর ম্যাডামের স্বামী দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিতেন। খুবই ভালো মানুষ ছিলেন ম্যাডামের স্বামী। আমাদের বন্ধু ছিলো মোজাহারুল নাম প্রাইভেট যখন ই পড়া শুরু হত সে ম্যাডামের স্বামীর সাথে কবুতর আলু এসব নিয়ে গল্প শুরু করে দিত। ভালো এ লাগতো।
একটি মজার ঘটনা বলি, ক্লাশ এইট অথবা নাইনের সাময়িক পরীক্ষার সময়। টেকনিক্যালের সবাই জানে যে পরীক্ষা চলাকালীন বইগুলো সাধারনত সামনে স্যারদের বসার স্থানের নিচে অথবা রুমের দরজার বাইরে রাখা হত। পরীক্ষা যথারীতি শুরু হলো। অনেকেই ওয়াশরুমে যাওয়া শুরু করলো। আমার ও যাওয়া দরকার হলো বের হলাম। ফেরার সময় আমাদের এক বন্ধু ছিলো বেচারা করলো কি দরজার পাশে বই নিয়ে দেখা শুরু করলো পরীক্ষা চলাকালীন সময়ই। ঠিক সে সময়ে নাহার ম্যাডাম হাজির, ম্যাডাম ঐ বন্ধুকে ভালোভাবে জানতেন, খুবই সহজ সরল ছেলে ছিলো। তার হাতে বই দেখে বললেন “…… বলো আমি হাসবো না কাদবো?” বেচারা লজ্জা পেয়ে দে দৌড়। ম্যাডাম কে সবাই শ্রদ্ধা করত। উনি খুব একটা মারধোর করতেন না। তাই উনাকে সবাই ভয়ের চেয়ে শ্রদ্ধাই করত বেশি। এরকম শিক্ষক আছে বলেই ভালো মানুষ তৈরী হয়। শিক্ষকরা সবাই বরাবরই ভালো ই হয়। তবে ছাত্রদের আন্তরিকতা নিয়ে বড় করানোটা সবাই করতে জানেনা। যেটি নাহার ম্যাডামের একটি বড় গুন।
ম্যাডামের সাথে আরো কিছু স্যারের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। জেহাদী স্যার অসম্ভব ভালো মানুষ, স্যারের হাতের লিখা আমার খুবই পছন্দ ছিলো। তবে জেহাদী স্যারের একটি বিষয় আমি খুব ভাবতাম যে, স্যার ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন আবার ইংলিশ ও পড়াতেন। ভাবতাম মাদ্রাসায় পড়ে ইংলিশে ভালো হলেন কি করে? ঐ সময়ে ছোট ছিলাম বুঝতাম না। স্যার কবিতাও লিখতেন ঐ সময়ে।
নেক্সট পোষ্টে বাকি স্যার গুলোকে নিয়ে লিখবো।
একটি পোষ্ট লিখবো শুধুমাত্র আমাদের সবার প্রিয় সালাম স্যারকে নিয়ে। একজন মানুষের মধ্যে কত গুন যে থাকতে পারে সেটি স্যারকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা। ছাত্রদের নিয়ে ভাবতে হয়, এই বিষয়টি স্যারের মাধ্যমেই আমরা প্রথম বুঝতে পারি। উনি ছাত্রদের মনিটর করার জন্য সন্ধ্যার পর ছাত্রদের বাসায় বাসায় শিক্ষক পাঠিয়ে খোজ নেয়ার নিয়ম চালু করেছিলেন।
(চলবে…..)