বিদেশে এসে নানা ধরনের অভিগ্গতার সম্মুখীন হতে হয়। নিজেদের পরিচিত মানুষগুলো অপরিচিত হয়ে যায় আবার অপরিচিতগুলো অনেক কাছের হয়ে ওঠে। অনেক বাংলাদেশী দেখলে মুখ লুকাতো। কি জন্য মুখ লুকাতো বলতে পারবো না। তবে তারা বাংলাদেশের মানুষগুলোর মত না এটি বলা যেতে পারে। একদিন এক বাংগালী মহিলার সাথে কথা বলছিলাম সে বললো তার বাড়ি নীলফামারী নাম জিগ্গেস করতেই বিগরে গেলো বেচারী বলে যে এত কিছু জেনে আপনার লাভ কি?? (!) উত্তর দিলাম যে, আমার বাড়িও নীলফামারি তাই জানতে চেয়েছিলাম যে হয়ত কেউ পরিচিত থাকতে পারে।
সুইডেনে এসে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। যাদের সাথে পরিচয় সবাই মোটামোটি ইসলাম পালন করে। অনেক ফ্যামিলি আছে মাশাআল্লাহ খুবই ভালো। অনেক মানুষের ভীরে একটি ফ্যামিলর সাথে ভালো পরিচয় হয়ে উঠে। সে ফ্যামিলিতে একটি মেয়ে আছে। সে মাঝে মাঝে একটি প্রশ্ন করত আচ্ছা ভাইয়া; ইসলামে পুরুষ রা খ্রীষ্টান মেয়েদের বিয়ে করতে পারে কিন্তু মেয়েরা কেন ছেলেদের বিয়ে করতে পারে না এটাতো ফেয়ার না। তাকে অনেক বুঝালাম, সুন্দর উত্তর দিলাম, ডঃ জাকির নায়েক থেকে শুরু করে ইসলাম ডট নেট, অন ইসলাম নামক সাইট থেকে সুন্দর ব্যাখ্যা বের করে দিলাম। দেখি তারপর ও একই প্রশ্ন বুঝতে পারলাম যে সমস্যা কোথায়।
এরপর হঠাত কথা প্রসংগে আবার সেই প্রশ্ন কেন মুসলিম মেয়ে হয়ে খ্রিষ্টানকে বিয়ে করা যাবে না। তখন সরাসরি প্রশ্ন করি উত্তর পেয়ে যাই, যা আশংকা করছিলাম সত্যি ঘটনা। তাহলে উপায় এখন। বাবা-মা ইসলাম পালন করে। মনের মধ্যে একটু টান আছে বাবা-মা কষ্ট পাবে, আবার ওদিকে ৮ বছরের স্বপ্ন। কি করা যায়। তার চেষ্টা হলো যে আমার কাছ থেকে ব্যাপারটিকে জায়েজ করে নেওয়া। 🙂
পরিবারের লোকজনের ইসলাম নিয়ে সঠিক নলেজ না থাকলে এবং পাশাপাশি সঠিক প্রাকটিস না থাকলে বাচ্চাদের মধ্যে এরকম নানা রকম রোগ দেখা দেয়। পরিবারের মানুষেরা ইসলামের সঠিক প্রাকটিস না করলে বাচ্চারা সঠিক ইসলাম তো পায় না বরং ইসলাম ও মুসলিম নিয়ে তাদের মনে খারাপ ধারনা তৈরী হয়। যেমন বাংলাদেশি পুরুষদের মধ্যে ডমিনেন্ট করার প্রবনতা আছে যেটি ঠিক না। ফলে পশ্চিমা কালচারে বড়ে হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম ভূল শিক্ষা পায় ফলে নানা ধরনের মানসিক রোগ দেখা দেয় যার চিকিতসা করে ভালো করা যায় না, শেষে বলতে হয় আল্লাহর ইচ্ছে আমরাতো কম চেষ্টা করিনি, তখন নূহ (আঃ) এর ছেলের উদাহরন দিয়ে সন্তুষ্টি খুজতে হয়।
তারসাথে অনেক কথা হলো, তারকথা হলো আমিতো অন্য পরিবারে জন্ম নিলে মুসলিম নাও হতে পারতাম। অবস্থা দেখে তাকে বললাম যে, আমার কাছে খুব ভালো সমাধান আছে। সে তখন উতসুক হয়ে বললো যে, বলো তাড়াতাড়ি। বললাম যে তোমার বিবেক যা বলে সেটাই করো। তখন বলে যে, আব্বু আম্মু কষ্ট পাবে।
বললাম যে জটিল অবস্থা। কারন তোমার মন চাইছে কিন্তু বিবেক বলছে যে না করা যাবেনা। এই ধরনের অবস্থায় বিবেক কে ফলো করো।
তো তাকে জিগ্গেস করলাম যে, ছেলে কি তোমাকে খুব ভালোবাসে বলে যে হুমম ৮ বছর হলো 🙂 বললাম তাহলে তাকে বলো ইসলাম গ্রহন করতে। বলে যে সে খুব ভালো খ্রীষ্টান আর তার ফ্যামিলিও ভালো খ্রীষ্টান। আমি হাসলাম বললাম যে তোমার আব্বু আম্মুতো ভালো মুসলিম, তোমরাও তো ভালো মুসলিম ফ্যামিলি? সে বলে হুমম সেজন্যই তো কেউ কারো ধর্ম ত্যাগ করবো না কিন্তু বাচ্চাদের মুসলিম হিসেবে বড় করবো।
আমি বিভিন্ন অপশন বলছিলাম আর সে সেগুলোকে বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছিলো এবার বললাম, ছেলে তোমাকে বিয়ে করলে তো তার ধর্ম নষ্ট হবেনা, সে কার ধর্মের নিয়ম কে লংঘন করছে না, কারন তার ধর্মে তোমাকে বিয়ে করা জায়েজ, কিন্তু তুমি যদি তাকে বিয়ে কর তাহলোএ তো তুমি তোমার ধর্মকে ধর্মের নিয়মকে ভায়োলেইট করছো। সে অবশ্যই ভালো খ্রীষ্টান তবে তুমিতো ভালো মুসলিম হতে পারবে না।
তুমি কেন তার জন্য তোমার ইসলামের নিয়মকে ভায়োলেইট করবা।
এবার তার যুক্তি শেষ। বলে হুমম এটা ভালো পয়েন্ট বলেছো।
যাহোক বিদেশে এরকম নানা রকম ঘটনা আছে বেশিরভাগ ফ্যামিলিতে। বিদেশী জীবন অনেক সূখের কিন্তু সে সুখ তারা খুব বেশিদিন উপভোগ করতে পারেনা, যারা নিজেদের কালচার এবং ইসলাম মত জীবন যাপনে অভ্যস্ত না। জীবনের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হিসেবে ভূল ধরা পরে। মাঝেপথে জীবনের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়। দেশে ফেরাও হয় না আবার বিদেশে চোখের সামনে প্রিয় বাচ্চাদের কে বিধর্মীদের সাথে রাত্রীযাপনের কথা ভেবে চাপা কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। টুকটাক ইসলাম জানা লোক হলে বলবে আল্লাহ না দিলে আমরা কি করব, আর ইসলাম জানা লোক না হলে এই বিদেশী হাইব্রিড প্রজন্মের সদস্যদের দ্বারাই দেশি কালচারের দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়।
তাই সময় থাকতে আমাদের নলেজ অর্জন করা জরূরী আর সেটি হলো ইসলাম সম্মত ভাবে কিভাবে পরিবার গঠন করা যায় বাচ্চাদের কিভাবে ইসলামিক পরিবেশে বড় করা যায়।