ছোট বেলা থেকে সমাজের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগতো। সেই চিন্তা করার অভ্যস টা রয়ে গিয়েছে আজ অবধি। মাঝে মাঝে ই ভাবি কি রকম হবে, ২০ বছরের পরে বাংলাদেশের রাজনীতি? তখনও কি ককটেল ফুটবে? তখনও কি আগুন জ্বলবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই মন চলে যায় অনেক পেছনে, সেই পুরনো দিনের রাজনীতিতে। ভাবতাব তখনই কি ককটেল ছিলো? তখনও কি রাজনীতির ময়দানে পিস্তল, শটগান এসব নিয়ে মহড়া চলত?
সময়ের আবর্তনে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের ব্যবহৃত নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে ও বৈচিত্র চলে আসে। গ্রামে আগের হারিকেন, বা কেরোসিনের বাতির যে প্রচলন আজকে তা অনেকটাই নেই। গ্রামে গ্রামে বৈদ্যুতিক খুটি গুলো সুন্দর ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মনেপড়ে সেই ছোট বেলায় যখন গ্রামের স্কুলটি পূনঃনির্মান হচ্ছিলো সেখানে মটর গাড়িতে করে ইট-বালি নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েসহ সবাই সেই গাড়ি দেখার জন্য ছুটত। অথচ এখন গ্রামের পরতে পরতে এসব গাড়ি দেখা যায়। আগে গ্রামের গৃহস্থ্য বাড়িতে কাজের ছেলে থাকত সেই সব কাজ করত। এখন গ্রামে আর কাজের ছেলে খুজে পাওয়া যায় না। আবার আগে যেমন সবার বাড়িতে ফলের গাছ দেখা যেত গরু-ছাগল দেখা যেত এখন আর এসব দেখা যায় খুবই কম। সমাজের একটা পরিবর্তন সবার অজান্তে ঘটে গেছে এবং যাচ্ছে। আর সে পরিবর্তন কোন রাজনৈতিক নেতার উপর নির্ভর করে না। ব্যক্তি মানুষের প্রচেষ্টায় যে পরিবর্তন সেই পরিবর্তনের সামগ্রিকরূপ টাই এখন দেখা যায়। এটির জন্য কোন রাজনৈতক গোষ্ঠির অবদান নেই বল্লেই চলে। বরং এসব রাজনৈতিক গোষ্ঠিই এই উন্নতির পথকে দীর্ঘায়িত করে। সে যা বলছিলাম, গ্রামে গেলে আগের মত অলস বা কাজহীন মানুষ চোখে পড়ে কম। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের মধ্যে চিন্তার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে সমাজের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরী হয়ে গেছে, সবার কাছে সমাজের সুবিধাগুলো পৌছে যাচ্ছে তাই সবাই একই ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে চলছে যেখানে আগে গরীব মানুষের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ ছিলো সামান্যই। আর মানুষের কর্মব্যস্ততা এবং প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার কারনে রাজনীতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে, আবার অপর পক্ষে রাজনীতির ভিশন নিয়ে একটি শিক্ষিত শ্রেনীর উন্মেষ ঘটছে। ফলে রাজনৈতিক ময়দানে পরিবর্তন খুবই আসন্ন।
পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা যায় যে, সেখানে রাজনীতি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ থাকেনা। এর কারন হলো সেখানকার সমাজ একটি প্রতিযোগিতামূলক সমাজ। সেখানে মানুষ ব্যক্তি উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দেয় ফলে রাজনীতি করার মত সময় নষ্ট করার মত কাজকে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করে। আবার প্রতিযোগিতামূলক সমাজ হওয়ার কারনে, কেবল মাত্র ভিশনারী রাজনীতি ই টিকে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ। এখানে মানুষের জন্য কর্মসংস্থান না থাকায়, এমনিতেই অনেক মানুষ রাস্তা ঘাটে গল্প করে সময় কাটায়। ফলে রাজনীতির ময়দানে অলস সময় কাটানোর মত অনেক মানুষ পাওয়া যায়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এসব মানুষের যখন চিন্তার পরিবর্তন ঘটবে তখন রাজনীতির ময়দানে এসব মানুষকে আর খুজে পাওয়া যাবে না। এরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে ব্যক্তি উন্নয়নে। আবার প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আগে যেমন রাজপথে মিছিল মিটিং হত, সেটি আর তেমন হবে না। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে রাজনীতির ময়দান রাজপথ থেকে ভার্সুয়াল জগতে বিস্তৃত হবে। ফলে রাজনীতির ময়দানে সহিংশতা কমে যাবে। বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগিতা তৈরী হবে।
প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সহজলভ্যতার কারনে, সমাজের অল্পন শিক্ষিত মানুষগুলো ও খুব সহজে সঠিক খবর বা তাদের নিজেদের মতামত বা ব্যক্তি চিন্তা অপর মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারবে, ফলে সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো প্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে।
সমাজে আগের মোড়লতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্থানে ব্যক্তিতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ফলে সমাজে প্রতিটি মানুষ নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়ে উঠবে এবং দেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
তাই আগামীর রাজনীতি হবে, শিক্ষিত সমাজের রাজনীতি, আগামীর রাজনীতি হবে ভিশনারীদের রাজনীতি, আগামীর রাজনীতি হবে সুষ্ঠ রাজনীতি সেখানে অপরাজনীতির কোন স্থান থাকবেনা। আদর্শহীন, লক্ষহীন রাজনীতির মৃত্যু ঘটবে সহসাই। তাই যারা সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি কাজ করবে আগামীর রাজনীতি হবে তাদেরই রাজনীতি। যারা সমাজ ও জাতিগঠনে কাজ করবে রাজনীতির ময়দান থাকবে তাদের দখলে।