আশ্শাইখ মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান আত্তামীমী (রাহ:)
বইটি থেকে কিছু গুরত্বপূর্ণ বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো-
তিনটি মূলনীতি
যা জানা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর একান্ত কর্তব্য
মুলনীতিগুলো হলো :
প্রত্যেকে-
১) রব বা পালন কর্তা সম্পর্কে জানা।
২) দ্বীন সম্পর্কে জানা।
৩) নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা।
এই তিনটি জিনিস ভালোভাবে না জানলে এবং সেটি উপলব্ধি করতে না পারলে, আমল গুলো ইখলাসের সাথে করা সম্ভব হয় না। তাই এই তিনটি জিনিস সঠিকভাবে জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কর্তব্য।
তাওহীদ বা একত্ববাদ এর তিন অংশ
1) এক: তাওহীদুর রাবুবিয়্যাহ: “সৃষ্টি জগতের সৃষ্টিতে, নিয়ন্ত্রনে, লালন পালনে, রিজিক প্রদানে, জীবিত করণে, মৃত্যু প্রদানে, সার্বভৌমত্বে, আইন প্রদানে আল্লাহকেই এককভাবে মেনে নেয়া।”
2) দুই: তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ: “অর্থাৎ সর্বপ্রকার ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা, আর ইবাদতের প্রকার সমূহের মধ্যে রয়েছে : (১) দোয়া (২) সাহায্য চাওয়া (৩) আশ্রয় চাওয়া (৪) বিপদমুক্তি প্রার্থনা করা (৫) জবেহ করা (৬) মান্নত করা (৭) আশা করা (৮) ভয় করা (১০) ভালবাসা (১১) আগ্রহ ও (১২) প্রত্যাবর্তন করা, ইত্যাদি”
3) তিন: তাওহীদুজ্জাত ওয়াল “আসমা” ওয়াছ “ছিফাত”: “আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং তার নাম ও গুণাবলীসমূহে তাকে একক স্বত্বাধিকারী মনে করা।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বলুন: তিনি আল্লাহ একক স্বত্বা, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেননি, আবার তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর কেহ তাঁর সমকক্ষ হতে পারেনা” । [সূরা আল ইখলাস]
মুনাফেকী দু’প্রকার :
১) বিশ্বাসগত মুনাফেকী।
২) আমলগত (কার্যগত) মুনাফেকী।
এক : বিশ্বাসগত মোনাফেকী : এ প্রকার মুনাফেকী ছয় প্রকার, এর যে কোন একটা কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে নিক্ষিপ্ত হবে।
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিথ্য প্রতিপন্ন করা।
২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা।
৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৪) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার সামান্যতম অংশকে ঘৃণা বা অপছন্দ করা।
৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীনের অবনতিতে খুশী হওয়া।
৬) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীনের জয়ে অসন্তুষ্ট হওয়া ।
দুই : কার্যগত মুনাফেকী : এ ধরণের মুনাফেকী পাঁচ ভাবে হয়ে থাকে: এর প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানী : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “মুনাফিকের নিদর্শন হলো তিনটি:
১) কথা বললে মিথ্যা বলা।
২) ওয়াদা করলে ভঙ্গ করা।
৩) আমানত রাখলে খিয়ানত করা। [বুখারী ১/৮৩, মুসলিম ১/৭৮, নং ৫৯]
৪) ঝগড়া করলে অকথ্য গালি দেয়া।
৫) চুক্তিতে উপনীত হলে তার বিপরীত কাজ করা।” [বুখারী ১/৮৪, মুসলিম ১/৭৮, নং ৫৮]
ইসলামকে বিনষ্ট করে এমন বস্তু দশটি :
1) আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে শরীক বা অংশীদার করা। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ইবাদাতে তার সাথে কাউকে শরীক বা অংশীদার মানাকে ক্ষমা করবেন না, এতদ্ব্যতীত যা কিছু আছে তা যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করবেন” । [সূরা আন্নিসাঃ ১১৬]
2) দুই : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার মাঝে কোন মাধ্যম নির্ধারণ করে তাদের কাছে কিছু চাইবে ও তাদের সুপারিশ প্রার্থনা করবে এবং তাদের উপর ভরসা করবে সে ব্যক্তি উম্মতের সর্বসম্মত মতে কাফের হয়ে যাবে।
3) তিন : যে কেহ মুশরিকদের “যারা আল্লাহর ইবাদতে এবং তার সৃষ্টিগত সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে অংশীদার মনে করে তাদেরকে) কাফের বলবেনা বা তাদের কাফের হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের দ্বীনকে সঠিক মনে করবে, সে উম্মতের ঐক্যমতে কাফের বলে বিবেচিত হবে।
4) চার: যে ব্যক্তি মনে করবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রদর্শিত পথের চেয়ে অন্য কারো প্রদর্শিত পথ বেশী পূর্নাঙ্গ, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাসন প্রণালীর এর চেয়ে অন্য কারো শাসন প্রণালী বেশী ভাল, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিচার পদ্ধতির উপর তাগুতী শক্তির (আল্লাহদ্রোহী শক্তির) বিচার ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয় তাহলে সে কাফেরদের মধ্যে গণ্য হবে।
5) পাঁচ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন এর সামান্য কিছুও যদি কেহ অপছন্দ করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে (অপছন্দ করার পাশাপাশি) তার উপর আমল করে থাকে। [এর প্রমাণ কোরআনের বাণীঃ “আর এটা (জাহান্নামে যাওয়া) এ জন্যই যে তারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অপছন্দ করেছে , ফলে তিনি তাদের কর্মকান্ড নষ্ট করে দিয়েছেন”। [সূরা মুহাম্মাদঃ ৯]
6) ছয়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত দ্বীনের (জীবন বিধানের) সামান্যতম কিছু নিয়ে যদি কেহ ঠাট্টা করে, বা দ্বীনের কোন পুণ্য বা শাস্তি নিয়ে ইয়ার্কি করে তবে সেও কাফের হয়ে যাবে।
তার প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “বলুন: তোমরা কি আল্লাহ ও তাঁর আয়াত (শরয়ী বা প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী) এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ঠাট্টা করছ? তোমরা কোন প্রকার ওজর পেশ করোনা, কারণ তোমরা ঈমান আনার পরে কাফের হয়ে গিয়েছ” । [সূরা আত্-তাওবাঃ ৬৫, ৬৬]
7) সাত: যাদু, বান, টোনা এর দ্বারা সম্পর্ক বিচ্যুতি ঘটান বা সম্পর্ক স্থাপন করানো। যদি কেউ এ গুলি করে বা করতে রাজী হয় তবে সে কাফের হয়ে যাবে। এর প্রমাণ কোরআনের বাণী : “তারা দু’জন (হারুত মারুত) কাউকে তা (যাদু) শিক্ষা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই বলে যে, আমরা তো কেবল ফিৎনা বা পরীক্ষা স্বরূপ । সুতরাং তোমরা কুফরী করো না” । [সূরা আল বাকারাঃ ১০২]
8) আট: মুশরিকদের (যারা আল্লাহর ইবাদতে বা সার্বভৌমত্বে কাউকে অংশীদার বানায় তাদের) কে মুসলমানদের উপর সাহায্য সহযোগীতা করা।
এর দলীল আল্লাহর বাণী: “তোমাদের থেকে যারা তাদের (মুশরিকদের)কে মুরুব্বী বা বন্ধু মনে করবে তারা তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারী কোন জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেন না বা অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান না” । [সূরা আল মায়িদাঃ ৫১]
9) নয়: যে একথা বিশ্বাস করবে যে, যেমনিভাবে খিজির আলাইহিস্সালাম এর জন্য মুসা আলাইহিস্সালাম এর শরীয়তের বাইরে থাকা সম্ভব হয়েছিল তেমনিভাবে কারো কারো জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রবর্তিত শরীয়ত থেকে বাইরে থাকা সম্ভব, সেও কাফের বলে গন্য হবে।
10) দশ: আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া, দ্বীন শিখতে বা দ্বীনের আদেশ নিষেধ অনুসারে কাজ করার ব্যাপারে গুরুত্বহীন থাকে। এর দলীল আল্লাহর বাণী: “তার চেয়ে কে বেশী অত্যাচারী যাকে আল্লাহর আয়াত সমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে তা এড়িয়ে গেল, নিশ্চয়ই আমি পাপিষ্ঠদের থেকে প্রতিশোধ নেব ”। [সূরা আস্সাজদাহঃ ২২]
Allah amader sobai k janar and bujar towfik den
Ameen!