অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা ও পরিবর্তিত হয় অনেকাংশে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানুষকে মুক্ত চিন্তার অধিকারী করে তোলে। ফলে দেখা যায় প্রাচীন রাজতন্ত্র আজ বিলুপ্ত প্রায়। ২০ বছর আগের বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর সাথে বর্তমান সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন লক্ষনীয়। সমাজের মোড়ল শ্রেনীর কাছে প্রান্তিক শ্রেনীর বন্দকী জীবন আজ বিলুপ্ত প্রায়, ফলে মোড়ল শ্রেনীর প্রতি প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের শ্রদ্ধা ও সন্মান লোপ পেয়েছে অনেকাংশে। মানুষ নিজেদের অধিকার প্রতি নিজেদের কর্তৃত্ব যেমন অনেকটাই পেয়েছে ঠিক তেমনি শিক্ষার অভাবে সেই কর্তৃত্বের অপপ্রয়োগ ঘটে প্রায়ই।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড়ল শ্রেনীর উপস্থিতির ফলে নেতাকে প্রভুর ন্যায় ভক্তি ও ভালোবাসার পাত্র মনে করা হত। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এমন শ্রেনীর উপস্থিতির ফলে প্রান্তিক শ্রেনী শাসন ও শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সময়ের আবর্তনে প্রান্তিক শ্রেনীর ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর শিক্ষা ক্ষেত্রে অংশগ্রহন ও অগ্রগতি, শিক্ষার সহজ লভ্যতা এবং ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সমাজে একটি বিরাট মুক্ত চিন্তার শ্রেনী তৈরী করেছে। ফলে রাজনীতিতে ও পরিবর্তন অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু পরিবর্তিত মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক শ্রেনীর রাজনীতিতে অংশগ্রহনে অনিহার ফলে রাজনীতিতে অসাধু শ্রেনীর উদ্ভব হয় দ্রুতই। প্রভুশ্রেনীর প্রভু ভক্তি লাভের বাসনা, প্রান্তিক ও মধ্যবিত্তের প্রভু ভক্তিতে অনিহা ও আত্নসন্মানের বৃদ্ধি অসাধু শ্রেনীকে প্রভু শ্রেনীর শাসন ও শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দেয়, ফলে সমাজ ও রাজনীতিতে একটি শ্রেনীর দৃশ্যমান উপস্থিতি হ্রাস পেতে থাকে দ্রুত। রাজনীতির নেতৃত্বে শুন্যতা তৈরী হতে থাকে দ্রুত। ফলে একদিকে ভালো ইমেজের অরাজনৈতিক শ্রেনীর জন্ম হয়, অপরদিকে রাজনীতিতে সব অসাধু শ্রেনী সমাবেশ ঘটে। সমাজে ভালো খারাপের দ্বন্দ্ব ষ্পষ্ট হয়ে উঠে।
শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ , জিয়াউর রহমানের বিএনপি এবং এরশাদের জাতীয় পার্টির উৎপত্তির প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও। পরিবর্তিত অবস্থায় পরে পরিবার কেন্দ্রিক দলে পরিনত হয়, প্রধান তিনটি দল পরিবার কেন্দ্রিক হওয়া, এবং বাংলার মানুষের মধ্যে প্রভুভক্তির কিছুটা বিদ্যমান থাকার ফলে দেশের রাজনীতিতে নেতা তৈরীর ক্ষেত্রে এক ধরনের শুন্যতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে গনতন্ত্রে সুন্দর চর্চা ব্যহত হয় এবং অযোগ্য নেতৃত্ব তৈরী হয় এবং সমাজ ও রাজনীতিতে তৈরী হয় বিশৃংখলা। এই বিশৃংখলা পরিস্থিতির সৃষ্টি যেমন একদিনে হয়নি, ঠিক তেমনি এর থেকে পরিত্রানই একদিনে হবে না। পরিবার তন্ত্র থেকে বের হতে না পারলে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির মৃত্যু খুবই সন্নিকটে। দেশও জাতির সংকটময় অবস্থায় এতোদিনের রাজনীতি বিমূখ অর্থনৈতিকভাবে পরিবর্তিত সমাজ রাজনীতির অবস্থা নিয়ে সোচ্চার হওয়া শুরু করছে।
রাজনীতিতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর অংশগ্রহন যেমন রাজনীতির নেতা তৈরীর শুন্যতা পুরন করে দিতে পারে তেমনি বাংলাদেশে একটি সুস্থ্য রাজনীতির চর্চার ও পথ তৈরি করে দিতে পারে। তাই শিক্ষিত সচেতন শ্রেনীর রাজনীতিতে অংশগ্রহন এমন জরুরী তেমনি এমন সুষ্ঠ রাজনীতির চর্চাকে মানুষের সামনে নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্ব দেশপ্রেমিক সংবাদ কর্মীদের। সব সৎ মানুষগুলো মিলে একটি সুন্দর দেশ গঠন করা হয় খুব কঠিন না। এজন্য প্রয়োজন নিছক ব্যক্তিস্বার্থ্য পরিহার, অকারনে বিভেদ সৃষ্টি না করে আদর্শিক রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যে রাজনৈতিক দল গনতন্ত্রের চর্চা করে তাদের কে দেশের জন্য মানুষের সামনে নিয়ে যাওয়া।
আগামীর বাংলাদেশ হোক একটি সুস্থ্য রাজনীতি চর্চার দেশ। আগামীর বাংলাদেশ হোক শান্তিময় বাংলাদেশ।