রাত ৯.২০, ল্যাব থেকে বের হলাম বাসায় ফিরবো বলে। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। প্রকৃতির মাঝে কিসের জন্য যেন প্রতিক্ষা। তুষারের শুভ্রতায় ঢেকে গেছে সমস্ত মৃত্তিকা। মাটির কালো রং আজ যেন সাদায় ঢেকে পড়েছে। পাশের বাগানের গাছ গুলো পত্র হারিয়ে মৃত কংকাল এর মত ঠায় দাড়িয়ে আছে। দুরের কোন কারখানা থেকে সাদা ধোয়া গুলো মেঘের আকারে আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছিলো। আকাশে তাকিয়ে দেখি চাদের সাথে মেঘগুলো লুকোচুরি খেলছে। অপেক্ষা করতে থাকলাম বাসের জন্য, ততক্ষনে মন চলে গেছে গ্রাম বাংলায়। চোখের সামনে ভেসে উঠলো গ্রাম বাংলার সেই চিরচেনা সব দৃশ্য। কনকনে শীতের সকালের সেই খড় পোড়ার গন্ধ, গ্রামের সবাই মিলে খড়ের আগুনের পাশে বসে বসে আগুনের তাপে শীতকে দুরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা সাথে চলত নানা রকমের গল্প। কোন কোন দিন হয়ত খেজুর গাছের রস খাওয়ার জন্য খুব সকালে উঠে অপেক্ষা করা গাছলাগানোর সেই মানুষের জন্য। শীতের পিঠা খাওয়ার অপেক্ষা করার মধ্যে ছিলো এক অনাবিল আনন্দ। শীতের সময় যখন ধান কাটার সময় হতো রাতের বেলা ধান ক্ষেতে থাকতে হত খড়ের তৈরী ঘরে ধান যাতে কেউ চুরি করে না নিয়ে যায়। আবার কখনও বা নিজেদের ধান নিজেরাই দিয়ে রাতের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত।
গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য্যের সাথে কনকনে শীতে বয়স্ক মানুষগুলো যেন মানিয়ে নিতো ভালোভাবে। কারো কোন অভিযোগ ছিলো না। মিলেমিশে সবাই চলত এক হয়ে। শহুরে জীবনের কোথায় কি হচ্ছে সেটাতে গ্রামের মানুষ খুব একটা পাত্তা দিতোনা, কারন গ্রাম সুখ শান্তিতে ভরপুর এক স্বর্গের মত।
শীতে তুষারের প্রত্যাশা সুইডিশ জীবনের এক অবিচ্ছদ্য অংশ। তুষারের শুভ্রতায় সুইডিশরা এক অনাবিল প্রাকৃতিক আনন্দে মেতে উঠে বুড়ো-ছেলে সবাই মিলে। এবার শীতের বৃষ্টিতে অতিষ্ঠ হয়ে যখন সবাই বসন্তকে বরন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক সেই সময়ে তুষারের শুভ্রতায় ভরে উঠলো প্রকৃতি।
বাংলাদেশে ঘটলো ঠিক তার উলটো। মানুষ যখন রাজনীতির কালো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল ইলেকশন নামক এক তুষার পাতের মুছে যাবে তাদের এই কালো ধোয়া। কিন্তু সেই ইলেকশন এ শাপে বর হয়ে উঠলো, একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেরা নিজেরা ভোট করে সংসদ গঠন করে দেশ ও রাজনীতির ভবিষ্যতকে এক অজানা গন্তব্যের পথে পরিচালিত করা শুরু করলো, কালোধোয়ার নিয়ন্ত্রকরা।
তারপর ও গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনে এসবের প্রভাব হয়ত সামান্য। শীতের কনকনে ঠান্ডায় গ্রামীন মানুষ যখন খড়ের আগুনে জীবন বাচানোর চেষ্টা করছে। ঠিক তাদের ই শ্রমের টাকায় গড়া প্রাসাদ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে ক্ষমতার জন্য লালায়িত মানুষেরা। শহুরে জীবনে ক্ষমতার কাড়াকড়ি চললেও। শীতের দিনে গ্রাম বাংলার চাদের আলো আর গাছের ছায়ায় প্রকৃতির যে অদ্ভুত সু্ন্দর রূপ ফুটে উঠে ঠিক সেই রূপের মত গ্রামীন মানুষগুলোর মধ্যে ও এক অদ্ভুত সুখ বিরাজ করে।
গ্রামের ফেলা আসা সেই দিন গুলোকে মাঝে মাঝেই মিস করি। মিস করি মায়ের হাতের তৈরী শীতের পিঠা আর পায়েসকে।
গ্রাম বাংলার মানুষগুলো বেচে থাকা যুগ যুগ, গ্রামীন সৌন্দর্য্য ও বেচে থাক শহুরে জীবনের নোংরামী থেকে।