একদিকে প্রতিবেশি ভারতের প্রতাক্ষ মদদে বেপরোয়া আওয়ামীলীগ, ভারতের আশ্বাসে নিরব বিএনপি, ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার ঘুমন্ত সাধারন মানুষ অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃৎ, অস্তিত্বের লড়াইয়ে একাকী হয়ে পড়া জামায়াত ও তার অংগ সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির।
যে ধরনের প্রচার ই হোক তা পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষেই কাজ করছে। সাধারন মানুষের রাজাকার আন্দোলন যখন সেক্যুলার বনাম ইসলাম পন্থী প্রচারনা লাভ করলো, ঠিক তখন ই সেক্যুলারদের নিজস্ব পদ্ধতিতে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য হয়ত কিছু নতুন উপাদান খুজে পেলো। সেক্যুলার দের জয় জয়কার এই একবিংশ শতাব্দীতে দেশিয় আন্দোলন যখন সেক্যুলার বনাম ইসলাম পন্থী হিসেবে পুরোপুরি চিহ্নিত হবে তখন হয়ত জামায়াত-শিবির বৈদেশিক সমর্থন অনেকাংশে হারিয়ে ফেলবে। দেশীয় মানুষের অনুভবের শক্তিহীনতা, দেশের মিডিয়ার একচোখা নীতি অধিকন্তু সরকারের ইতিহাসের স্মরনীয় দমন-নিপীড়নে জামায়াত-শিবির বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। হয়ত এই অসহায়ত্ব তাদের আন্দোলন থেকে দমাতে পারবেনা কিন্তু যে প্রতাক্ষ বিরোধ সৃষ্টি হলো সেটি হয় সংকটত্তোর বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি তথা ইসলামি রাজনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের মানুষের ইসলাম বিমূখতা স্পষ্টত লক্ষনী্য, এই অবস্থায় সংকট কালীন সময়গুলোতে মানুষের আবেগ ও প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষন ও সেটা নিয়ে চিন্তা একান্ত জরূরী। যাতে করে সংকট উত্তরনের পর নতুন কৌশল নীতি ঠিক করা যায়। ৪০ কিংবা ৭০ দশকের নীতি আবেগ দিয়ে হয়ত বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি সম্ভব নয়। এটি বুঝতে হয়ত অনেক দেরী হয়ে যাবে।
হয়ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সংকট আওয়ামীলীগের জন্য ই। যখন ছাত্রলীগের অপরাধ চরম আকার ধরন করলো, যখন সরকারের মন্ত্রীসভার সবক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া শুরু করলো, যখন পুরো বিশ্ব আওয়ামী সরকারের ব্যর্থা নিয়ে একে কে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শুরু করলো ঠিক তখন ই, অতিসুকৌশলে মিথ্যার ধারকদের চিরাচরিত সেই নিয়মে সুক্ষ্নষঢযন্ত্র শুরু করে দিলো।
কোন রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো প্রতিপক্ষের ষঢ়যন্ত্র বুঝতে না পারা। আর সেটি এখন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইসলাম পন্থিদের জন্য। অধিকন্তু চারিদিকে ভারতবেষ্টিত থাকার কারনে, ভারতীয় কালচারের প্রভাব ও বেশ লক্ষনীয়। আর তাই পৃথিবীর অন্যন্যা ইসলামি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর অনেক চিন্তা করে এগুনো উচিত।
সাধারন মানুষ, যারা মনে করছে জামায়াতের সাথে সাধারনের লড়াই তারা মূলত একচোখা মিডিয়ার কারনে অন্ধ হয়ে গেছে। শাহবাগের আন্দোলনে যখন নাস্তিকরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে, যেখানে তাদের খাওয়া করচ সরকার বহন করছে, যেখানে পুলিশ প্রটেকশনে তারা থাকতে পারছে, সেখানে একটু চিন্তা করা হয়ত জরূরী ছিলো। হয়ত আপনারা বুঝার আগে অনেক দেরী হয়ে যাবে।
সে যাই হোক, এই অসম লড়াইয়ে যদি জামায়াত হেরে যায় তাহলে এর পরিনতি হয়তো সবাইকেই ভোগ করতে হবে। গত ৪ বছরে যারা চোখ খোলা রেখে পত্রিকর খবর পড়েছেন তারা হয়ত বুঝতে পারবে। আর যদি জামায়াত তার ঈমানী শক্তিতে জিতে যায় তাহলে হয়ত এর সুফলটাও সবাই ভোগ করবে। অন্তত বিগত ৪০ বছর ধরে যারা জামায়াত কে চোখ খোলা রেখে পর্যবেক্ষন করেছে তারা বুঝতে পারবে।
শেষে কিছু ঘটনা উল্লেখ করব যেগুলো হয়ত সাধারন মানুষ দাবী করতে পারত।
১) শেয়ার বাজারের ৩৫ হাজার কোটি টাকার চুরি।
২) সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারী
৩) রেলওয়ে গেইট নামে বড় ধরনের চুরি।
৪) পদ্মা সেতুতে বড় ধরনের চুরি।
৫) হত্যাকান্ডের কথা না বা বললাম। যে সাধারন মানুষ গুলো গত ৪ বছরে আওয়ামী সরকার কর্তৃক মানুষ হত্যার বিচার চায় না, যে সাধারান মানুষগুলো রাজপথে মানুষ হত্যার বিচার চায় না, তারা যে সাধারন বিবেক সম্পন্ন মানুষ না এটি বিবেক সম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারে।
শেখ হাসিনা যখন ১০ টাকার চাল খাওয়ানোর কথা বলে ভোট আদায় করেছিলো তখন হয়ত কেউ বুঝতে পারেননি যে, শেখ হাসিনার কৌশল। হয়ত আজ ও বুঝবেন না শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কৌশল। যেদিন বুঝতে পারবেন সেদিন দেখবেন আপনার পরিবারের কেউ আওয়ামী সোনার ছেলে দ্বারা ধর্ষিত, হয়ত দেখবেন আপনার পরিবারের কেউ গুম, হয়ত দেখবেন বাবার সামনে ছেলের খুনের দৃশ্য।
যারা লড়াই করে সত্যের জন্য, তারা হয়ত হার জিতের জন্য লড়াই করেনা। তারা লড়াই করে আদর্শের জন্য। তারা লড়াই করে একটি মানবতার মতবাদকে প্রতিষ্ঠার জন্য। যারা জামায়াত-শিবিরের মৃত্যুকে চোখ বুঝে উপভোগ করছেন, কিংবা ধ্বংস কামনা করছেন। গত ৪০ বছরের রেকর্ড গুলো চিন্তা করুন, না পারলে গত ৪ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের কথা ভাবুন। আর যদি দুঃশাসনে আপনার মুক্তি খুজে থাকেন। তাহলে সৃষ্টিকর্তা হয়ত সেই দুঃশাসন দিয়ে জামায়াত-শিবিরের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করাবেন। সৃষ্টিকর্তা কারো চাওয়া অপূর্ণ রাখনেনা। কাউকে দেন দুনিয়ার জীবনে কাউকে হয়ত আখিরাতের জীবনে।