কারা ধর্ম ব্যবসায়ীঃ
যারা ধর্মকে ব্যবসায়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আর্থিক ও বৈষয়িক বিষয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে তারাই মূলত ধর্ম ব্যবসায়ী।
আমাদের সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় কিছু ব্যক্তি ধার্মিক কিছু অধার্মিক আর কিছু ব্যক্তি বকধার্মিক। ধার্মিক ও অধার্মিকের মাঝের এই শ্রেনীটিই মূলত ধর্মব্যবসায়ী। এরা ধর্মীয় নামে নিজেদের পরিচয় দেয়, নিজেদের কে ধার্মিক বলে পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায় করে।
কারা মূনাফিকঃ কুরাআনের বিভিন্ন জায়গায় মুনাফিক এবং মুনাফিকের পরিচয় সম্বন্ধে বলা হয়েছে।মুনাফিক তাকেই বলে যার মধ্যে নিফাক রয়েছে। আর নিফাক বলে উহাকে যার ভিতরের অবস্থা বাহ্যিক প্রকাশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মুনাফিকের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন
১) তারা যখন ঈমানদার লোকদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা ঈমান এনেসি। কিন্তু নিরিবিলিতে যখন তারা তাদের শয়তানদের সাথে একত্রিত হয়, তখন তারা বলেন, আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি, আর তাদের সাথে আমরা শুধু ঠাট্টাই করি মাত্র। (বাকারা-১৪)।
২) তাদেরকে যখন বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেইদিকে এস ও রসুলের নীতি গ্রহন কর, তখন ও মুনাফিকদেরকে আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার নিকট আসতে ইতস্ততঃ করছে ও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। (নিসা-৬১)
৩) যে সব মুনাফিক ঈমানদার লোকদের বাদ দিয়ে কাফের লোকদেরকে নিজেদের বন্ধু ও সঙ্গীরূপে গ্রহন করে, তাদেরকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের জন্য তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে। উহারা কি সন্মান লাভের সন্ধানে তাদের নিকটে যায়? অথচ সন্মানতো একমাত্র আল্লাহরই জন্য। (নিসা ১৩৮-১৩৯)।
৪) হে নবী! কাফির ও মুনাফিক উভয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে জিহাদ করো এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন কর। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম, আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। ( তওবা-৭৩)।
মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে হাদীসঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি (১) কথা বললে মিথ্যা বলে (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে (৩) আর তার কাছে কোন আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে। (বুখারী)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সঃ) বলেন, চারটি দোষ যার মধ্যে থাকে সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে উক্ত দোষগুলোর কোন একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে উক্ত দোষগুলোর কোন একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। (১) তার কাছে কোন আমানত রাখলে সে তার খেয়ানত করে (২) সে কথা বললে মিথ্যা বলে (৩) ও্য়াদা করলে তা ভঙ্গ করে (৪) আর সে ঝগড়া করলে গালাগালি দেয়। (বুখারী)
৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে খোদা (সঃ) বলেছেন, এমন দুটি গুণ আছে যা মুনাফিকের মধ্যে একত্র হতে পারে না। (১)সুস্বভাব (২) দ্বীনের যথার্থ জ্ঞান। (মিশকাত)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করার পর তাদের কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি কি তোমাদের রব নই, সবাই বলেছিলো যে হ্যা তুমি ই আমাদের রব। আল্লাহ কে রব হিসেবে মেনে নিয়ে তার দেয়া নিয়ামত ভোগ তার সাথে বেয়াদবী করা প্রতারনাই নামান্তর। মূলত প্রতিটি মানুষ আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকার ই মূলত মুনাফিকের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে তাদের জন্য নবী রাসুল পাঠিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
“তিনি (আল্লাহ ) তোমাদেরকে পছন্দ করছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তিনি তোমাদের ওপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের বপিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন। পূর্বেই এবং এই কুরআনেও যাতে তোমাদের জন্য রাসুল সাক্ষ্যদাতা হয় আর তোমরা মানবমন্দলীর জন্য সাক্ষ্যদাতা হও। (হজ্জ-৭৮)।
ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রশিবিরঃ
ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরকে নিয়ে লিখার আগে দেখে এই দুই সংবিধান কি বলে।
ছাত্রলীগ এর সংবিধানঃ
Click this link… http://bclru.weebly.com/constitution.html
Click this link… http://shibir.org.bd/page/content/4
উপরের দুটি সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাচাই করলে দেখা যায়
ছাত্রলীগের আদর্শ হিসেবে বাংগালী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান কে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক দিক-নির্দেশনা মোতাবেক স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষ্যে সুশৃংখল কর্মী বাহিনীর সমন্বয়ে আদর্শ ভিত্তিক একটি সংগঠন গড়ে তোলা ও আদর্শিক পরিচর্যা অব্যাহত রাখা। দীর্ঘ সময়ের শিক্ষার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে একটি সহজলভ্য, বৈজ্ঞানিক, গণমূখী, বৃত্তিমূলক, কারিগরী, মাতৃভাষা ভিত্তিক সর্বজনীন শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে আর্থ- সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর মধ্যে কোথাও ইসলাম শব্দটি নেই। ইসলাম এর ব্যাপারে কোন পরিকল্পনাও নেই। এদের মাদার রগানাইজেশন আওয়ামীলীগের সংবিধানের মূল লক্ষ্য হলো সেকুলারিজম, সজন্যই সে দলের সাধারন সম্পাদক বলে যে “আমি হিন্দু ও না , আমি মুসলমান ও না” অথচ এই দলের নেত্রী মাথায় কাপড় দিয়ে ইসলামের কথা বলে সরল মনা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
অপরদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংবিধানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, যা তারা সংবিধানে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনে ধারণ করে সেই সংগ্রামে করে যাচ্ছে, এমনকি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা যেমন মুখে বলে তেমনি তা তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের প্রতিষ্ঠার লড়াই ও সংগ্রামে অবতীর্ণ যেটাই কিনা মুসলিমের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আস-সফ্ এর ২-৪ নং আয়াতে মূলত এসব কথা বলেছেন।
“মুমিনগন তোমরা যা করা না , তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।”
কুরআনের আয়াতগুলোর সাথে ছা্ত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের চরিত্র মিলে যায়, যা কিনা কপট মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কে এসব কপট মানুষ হতে দূরে রাখুক এবং সাধারন মানুষ যাতে এসব ভাওতাবাজদের প্ররোচনায় পড়ে নিজেদের ঈমান ও আমল নষ্ট না করে সেজন্য আমরা দোয়া করি।
একজন মুসলিম এর উচিত এসব বিষয় চিন্তা করা না হলে আমল সব বরবাদ হয়ে যাবে। অন্তত যেকোন ইসলামী দলে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে হলে এসব কপট ধব্জাধারী মুসলিমদের সংসর্গ ত্যাগ করা উচিত। এতে ই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান।
আল্লাহ আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ দান করুন।