লেখাটি মিশুক মুনীরের ব্উয়ের মন্তব্যর প্রেক্ষিতে লেখা। তবে উনাকে রুপক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
গত কয়েকদিনে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। যেমনটি হয়নি ৪০ জন ছাত্রের মৃত্যুর পর। যেমনটি হয়নি জাহাজ ডুবিতে ১০০-১৫০ জন মানুষের মৃত্যুর পর। আমার ভাবতে অবাক লাগে যে আমি বা আমরা কেউ ই সাম্যে বিশ্বাস করিনা। হয়তো অনেকে বলবেন যে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর দেশের সম্পদ । হয়তো তাই। কিন্তু যে ৪০ জন ছা্ত্র মারা গেলো তাদের মধ্যে থেকে ও হয়তো উনাদের চেয়ে বড় কেউ হতে পারত। জাহাজ ডুবিতে অনেক মানুষ মারা যায় , আমরা কিন্তু সেসব খেয়াল ই করিনা। সেখান থেকে তো বড় কেউ হতে পারত। কিন্তু অবাক করা বিষয় আমরা অনুভূতির সাম্যে বিশ্বাস করি না। আমরা মানুষের জীবন কে গরীব-ধনী ও নামী- বেনামীতে ভাগ করে ফেলেছি। আর তাই তারেক মাসুদের মৃত্যু আমাকে যেমন কাদায় , রহীমুদ্দিনের মৃত্যু আমাকে কাদায় না। মানুষকে পিটিয়ে যখন মারা হয় তখন আমরা চুপ করে থাকি আমরা ব্যাথিত হই না। আমাদের মানবিক অনুভূতিগুলো আসলে কমে গেছে।
আমাদের প্রধান সমস্যা আমরা বাস্তবতার চেয়ে আবগের দ্বারা বেশি প্রতাড়িত হ্ই। আমরা চিন্তার আগে সিদ্ধান্তে পৌছে যাই মতামত দিয়ে দেই।
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর দুজন ই দেশের সম্পদ। দেশ দুটি সম্পদ হারিয়েছে। অনেকেই ফেইসবুকে লিখার মাধ্যমে কান্নাকাটি করেছে। নায়ক ইলিয়াস কান্চন যখন নিরাপদ সড়কের জন্য ১০-১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছে তখন দেশের কয়জন সম্পদ তার সাথে নিজেদের একাত্নতা ঘোষনা করেছে । আমি কারো সমালোচনা করবোনা শুধু বলবো আমরা একটু বেশি আবেগী। আর এই আবেগের কারনে আমরা বাস্তবতাকে হারিয়ে ফেলি।
টিভি ও চলচিত্র দুটি মাধ্যম ই অনেক শক্তিশালী মাধ্যম। দেশের মানুষকে সচেতন ও প্রভাবিত করার জন্য এদুটি মাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর দুজনই এই দুই মাধ্যমের প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন।
শুধু ড্রাইভার কে দোষ কেন, সরকারকে বা দোষ কেন। হ্যা উনাদের দোষতো অবশ্যই আছে তবে আমরা কম কিসে।
আমাদের একটি একটি করে ভোট নিয়েই কিন্তু সরকার গঠিত হয়। আর সরকারকে দ্বায়ী করলে পারত পক্ষে এটা বললে মনেহয় অযৌক্তিক হবে না যে আমরা নিজেরাই অনেকাশে দ্বায়ী।
একটি একটি মানুষ মিলে একটি একটি মিছিল, একটি একটি মানববন্ধন কই আমরা কি নিরাপদ সড়কের জন্য সোচ্চার?? রাজনৈতিক দলতো আমাদের নিয়ে ই হয়। গরু ছাগলরাতো আর মিছিলে যায় না??
মন্তব্যটি করেছি এজন্য যে উনি স্বজন হারিয়েছেন বলে বুঝেছেন যে কেমন লাগে। কিছুদিন আগে একসাথে ৪০ জন ছাত্র মারা গিয়েছিলো সেদিন কিন্তু উনার অনুভূতি কিন্তু ওরকম ছিলো না। হয়ত কিছুদিন পর দেখবেন উনিও হাসিনা অথবা খালেদার পাশে হাটছে। এমন ই হয়। তাই বলেছি চিপায় না পড়লে কেউ মুখ খুলেনা।
আমরা ৪০ বছর আগের যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে ব্যস্ত। যুদ্ধে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিলো আর কারা ই বা মেরেছিলো তাও আজ মিমাংসিত না। কিন্তু স্বাধীনতার গত ৪০ বছরে গড়ে প্রতিদিনে ৩০ জন করে ধরলে ৪৪২০০০ জন মানুষ শুধু একসিডেন্ট আর খুনোখুনিতে মারা গেছে। আমরা কয়জন এসব নিয়ে কথা বলেছি???? যা প্রতিনি্যত আমাদের ভোগাচ্ছে যেটা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। সেটা নিয়ে আমরা কিন্তু কেউ কথা বলিনা। কারন আমরা সুবিধাভোগী। আমরা এসব নিয়ে কথা বললে ক্ষমতাসীন দলের ছায়া পাবোনা।
তাই আমি কাউকে দোষ দেইনা। দোষ দেই নিজেকেই। আমি ই বা আমার দ্বায়ীত্ব কতটুকু পালন করি বা করেছি। আর কতটুকু ই বা করব। হয়ত বা এই লিখা পর্যন্ত শেষ। হয়তো একদিন আমি অথবা আমার কেউ মারা যাবে সেদিন আমি উনার মতো ই কাদবো। কিন্তু তারপর সব আগের মতো।
ফেইসবুকে এক ভাইয়ের পোষ্টে মন্তব্য করছিলাম তার প্রতিউত্তরে লিখতে বসে এতো কিছু লিখা। মিশুক মুনীরের স্ত্রীর মন্তব্যর লিংকে বলেছিলাম “যে উনি ঠিকই বলেছেন কিন্তু উনার কথাগুলো কিন্তু স্বামী হারানোর আগে বের হয়নি। আমরা কেউ ই চিপায় না পড়লে কিছু ই বলি না।