মুসলিম ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। ব্লগে ইদানিং নব্য কিছু লোকের আগমন ঘটেছে। অনেকেই মুসলিম ভাইদের কাফের ও মুনাফিক বলে গালি দেয়। অনেকেই কথায় কথায় নাউযুবিল্লাহ বলে অপর মুসলিম ভাইদের অবজ্ঞা জ্ঞাপন করেন।তাবলীগের কিছু ভাইয়ের জামায়াতে ইসলামী, সালাফি ও আহলে হাদীস সহ অনেক ইসলামিক দলের লোকদের নিয়ে আপত্তিকর কথা বলেন যা একজন মুসলিম হিসেবে সত্যিই দুঃখজনক।দেশের ইসলামি ব্যক্তিত্বদের অপবাদ দেয়া সহ আরো অনেক খারাপ বিশেষনে বিশেষায়িত করা হয় , যা একজন মুসলিম ভাইয়ের কাছ থেকে কাম্য নয়। আমি ইসলামি সংগঠনের কর্মী হিসেবে ব্যক্তি অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। জাময়াতে ইসলামি বাংলাদেশ ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের ভাইয়েরা, কোন মুসলিম ভাইকে অমুসলিম , কাফের বলে গালি দেয়না। যদি কেউ দিয়ে থাকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এসব ব্যক্তিগত আক্রমন ও তাবলীগী কিছু ভাইয়ের লিখা আমাকে এই লিখাটির জন্য মূলত অনুপ্রেরনা যোগায়। তাই আমি তাবলীগ নিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেই, হাতের কাছে যেসব বই আছে সেসব বই, কুরআন হাদীস থেকে আমার কিছু জিজ্ঞাসা ব্লগের সন্মানিত ব্লগার ভাইদের কাছে তুলে ধরব। আমি একজন মানুষ ভূল হওয়া স্বাভাবিক, আপনারা লিখার মধ্যে কোন ভূল থাকলে সংশোধন করে দিবেন।
শিরক ব্যতীত অন্যকোন পাপকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে কাফির বলা যাবে না।
“আল্লাহ তার শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না । এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন” (৪: ৪৮)
“মুমিনদের দু`দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে”। (৪৯:৯)
এখানে সংঘর্ষের পাপে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও, তাদের মুমিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
একজন মুসলিম ভাইকে অমুসলিম বলার এখতিয়ার কোন মুসলিম ভাইয়ের নেই, যতক্ষন সে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর উপর ঈমান আনে এবং ইসলামের মৌলিক কাজগুলো করে।
আব্দুল্লাহ ইবন্ মুহাম্মাদ আল-মুসনাদী (রঃ)…..ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদ্দিষ্ট হয়েছি, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, আর সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে তবে আমার কাজ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারন থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা।আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত। ( বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, কিতাবুল ঈমান অধ্যয়, ২৪ নং হাদীস)
ব্লগে অনেক ভাই মুসলিম ভাইদের বিভিন্ন ভাষায় গালি দিয়ে থাকে তা ব্লগের পরিবেশ তথা মুসলিম ভাইটির মনে রক্তক্ষরন করে।
মুহাম্মদ ইবনে আর`আরা (র) ….যুবায়দ (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (র) কে মুরজিআ` সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) আমার কাছে বর্ননা করেছেন যে, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (বুখারী ১ম খন্ড,কিতাবুল ঈমান, ৪৭ নং)
অনেকেই আছে যারা অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করেন।
হারিসা ইবনে ওয়াহব্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কোন ধরনের লোক বেহেশতী হবে আমি কি তা তোমাদের বলব না? প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি যাকে লোকেরা শক্তিহীন ও তুচ্ছ জ্ঞান করে। সে যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে শপথ করে , তবে আল্লাহ তা অবশ্যই পূর্ণ করার সুযোগ দেন।কোন প্রকৃতির লোক দোযখে যাবে তা আমি কি তোমাদের বলব না? প্রত্যেক নাদান-মূর্খ, উদ্ধত ও অহংকারী ব্যক্তি দোযখে যাবে।
(রিয়াদুস সালেহীন, ১ম খন্ড ২১২ নং হাদীস)
অনেকই যুক্তিতে না পেরে গালি গালাজ শুরু করে দেয়।
কাবীসা ইবনে উকবা (র)…..আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১) আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে ; ২) কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩) চুক্তি করলে ভঙ্গ করে; এবং ৪) বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।( বুখারী ১ম খন্ড, কিতাবুল ঈমান, ৩৩ নং হাদীস)।
অনেকই আছেন যারা অপর ভাইয়ের পেশকৃত দলীলকে অবজ্ঞা করে ছল চাতুরীর আশ্রন নেন এবং নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার মিথ্যার আশ্রয় নেন।
“আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে কখন ও পছন্দ করেন না যে নিজ ধারনায় অহংকারী এবং নিজেকে বড় মনে করে আত্নগৌরবে বিভ্রান্ত”” ( সূরা আন নিসাঃ ৩৬)
অনেকেই মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামির নেতাদের নিয়ে খারাপ কথা বলেন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “যারা ঈমানদার নর-নারীদের কষ্ট দেয় এমন কোন অপরাধের জন্য যা তারা করেনি, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে” ( সূরা আল-আহযাবঃ ৫৮)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান কোন ব্যক্তি নিঃস্ব-গরীব? সাহাবাগন বলেন, আমাদের মধ্যে গরীব হচ্ছে যার অর্থ-সম্পদ নেই। তিনি বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব-গরীব ব্যক্তি হবে, যে কয়ামতের দিন নামায-রোযা-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদতসহ আবির্ভূত হবে।কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো মাল আত্নসাত করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মেরেছে ( সে এসব গুনাহ ও সাথে করে নিয়ে আসবে), এদেরকে তার নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিসমূহ পূরণ করার পূর্বেই যদি তার নেক আমল ও শেষ হয়ে যায় তবে দাবিদার গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে, অতঃপর তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।
(রিয়াদূস সালেহীন ১ম খন্ড, ২১৮ নং হাদীস)
ব্লগে সবাই শালীন ভাষায় নিজেদের যুক্তি মতামত তুলে ধরতে পারে সুন্দর ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে যা ব্যক্তি আক্রমন বর্জিত। বাঙ্গালী জাতির লোকদের বড় সমস্যা হলো সবাই নিজেদের বড় ভাবেন। মওদূদী বাদ বলে ইসলামে কোন মতবাদ আছে কিনা আমার জানা নেই। জামায়াত শিবিরের লোকজন কখনই এরকম কোন মতবাদের কথা বলেনা । অন্তত আমি শুনিনি। যা বলে কোরআন ও হাদীস থেকে আলোচনা করে। এরমধ্যে মাওলানা মওদূদী (রহঃ) নিয়ে হীন উদ্দ্যেশে ব্লগে ব্যক্তি আক্রমন নিতান্তই দুঃখ জনক। আর সেসব প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসে জামায়াতে ইসলামী যা কিনা বাংলাদেশের অন্যতম ইসলামিক শক্তি সেটার গায়ে কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস, ঘৃণ্য যুক্তি কথা মুসলিম হিসেবে নীরবে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। তাই ব্লগের মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ সদস্য যেমন দেশের সন্মানিত ব্যক্তি তেমনি দেশের আলেম সমাজ ও সবার কাছে সন্মানিত ব্যক্তি। সুতরাং ব্যক্তি আক্রমন মূলক পোষ্ট, পোষ্টে গালি গালাজ, ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ছবি বিকৃতি, নামের বিকৃতি এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্লগারকে নোটিশ পাঠনোর অনুরোধ করছি। ইসলামি কোন বিষয়ে কেউ অযথা ফেতনা তৈরী করতে উদ্যত হলে আপনারা আপনাদের ঈমানীচেতনা বোধ থেকে নোটিশ পাঠাবেন এটাই আমরা কামনা করি।
সবাইকে যুক্তি তর্কে, মুনাফিক, কাফির, অমুসলিম, ছাগু, এসব শব্দ পরিহার করার অনুরোধ করছি।